করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চলতি বছরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী ক্লাসে অটো উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হলেও শিক্ষার্থীদের ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করতে এক মাসের সংক্ষিপ্ত অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক মূল্যায়ন করা হবে। যা ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। এ মূল্যায়নকে ঘিরে বাণিজ্য শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা। এটিকেই সুযোগ হিসেবে নিয়ে বাড়তি অর্থ আয় করছেন প্রধান শিক্ষকরাও। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে নিয়ে বকেয়া বেতন-ভাতা আদায়ের চেষ্টা করছেন। না দিলে অ্যাসাইমেন্ট নেওয়া হচ্ছে না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এবং মাউশির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, অ্যাসাইমেন্ট অনলাইনে নেওয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও স্কুলে যেতেও বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এমনকি অভিভাবকদের ফোন করে মূল্যায়নে ভালো নম্বর দেওয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে টাকা চাচ্ছেন শিক্ষকরা। কমিশনে ফটোকপি দোকানে বিক্রি করছেন। বেশ কয়েকজন অভিভাবক মাউশিতে এসব অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট করানোর নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষকরা টাকা নিচ্ছেন এমন কিছু অভিযোগ এসেছে। এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে মাউশি। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অ্যাসাইমেন্ট কঠোরভাবে মনিটরিং করতে বলেছি। কোনো শিক্ষক টাকা চাইলে শিক্ষার্থী-অভিভাবরা যেন সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে জানায় সে পরামর্শও দেন তিনি। রাজধানীর দনিয়ার একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন তাবাসুম ফারিয়া। তার বাবা মাসুম আরিফ মাউশিতে অভিযোগ করে বলেন, ওই স্কুলের একজন শিক্ষক তার সন্তানের মূল্যায়ন ভালোভাবে করে দেবেন বলে ১ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই শিক্ষক তাকে বুঝান, মূল্যায়নে ভালো নম্বর দিলে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে সহায়ক হবে। ওই অভিভাবক মাউশিতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মূল্যায়ন হবে মূলত তার সন্তানের ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করতে। এটা পরবর্তী ক্লাসে উঠতে কোনো সহায়তা করবে না এবং এটা সম্পূর্ণ ফি'তে করবেন শিক্ষকরা। এরপর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে দেশে বিভিন্ন জায়গা থেকে এ ধরনের অভিযোগ এসেছে মাউশিতে। অভিযোগে বাড়তি টাকা দাবি না দিলে পরের ক্লাসে উঠতে না দেওয়ার মতো হুমকিও দিয়েছেন শিক্ষকরা। ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীপ্রতি অবৈধভাবে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা না দিলে শিক্ষার্থীকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে না বলে হুমকি দিয়েছিলেন একজন শিক্ষক। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার দিনমজুর শহীদ ও বিলকিস আক্তারের মেয়ে রিতু আক্তার আঠারবাড়ি এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার সে বিদ্যালয়ে যায় অ্যাসাইনমেন্ট আনতে। এ সময় তার সহপাঠীরা শ্রেণি শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যাচ্ছে দেখে রিতুও এগিয়ে যায়। রিতু তাকে অ্যাসাইনমেন্ট দিতে বললে আনোয়ার হোসেন তিন পাতার প্রশ্ন (অ্যাসাইনমেন্ট), দুটি কলম ও এক পাতার সাজেশন দিয়ে ৩৪০ টাকা দাবি করেন। সে বাবার দেওয়া ১০০ টাকার একটি নোট দিলে তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন আনোয়ার। সে সঙ্গে ৩৪০ টাকাই আনতে বলেন। অন্যথায় সে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না বলে শাসিয়ে দেন। এতে সে অপমাণিত হয়ে কান্নাকাটি করে বাড়িতে গিয়ে ঘটনা মাকে জানায়। এ অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি কোনো টাকা চাইনি। এলাকার কোচিংবাজ কিছু শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে এসব কুৎসা রটাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় হাতেম হাসিল ভাতহাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীম হোসেন তালুকদার অ্যাসাইনমেন্ট দোকানে বিক্রি করছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। ৩০ টাকার বিনিময়ে বাজারের কম্পিউটারের দোকানে এসব অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্কুলের শ্রেণি শিক্ষকের নির্দেশে আমরা দোকান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করছি। একেকটির দাম ৩০ টাকা। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক শামীম হোসেন তালুকদার। তিনি বলেন, আমি কোনো নির্দেশনা দিইনি। বরিশাল বিভাগীয় শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট বুঝিয়ে দেওয়ার নামে তাদের স্কুলে ডেকে আনা হচ্ছে। এরপর তাদের কাছে যে বকেয়া বেতন রয়েছে তা নেওয়ার চাপ দেওয়া হচ্ছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে এ বেতন তোলা হচ্ছে বলে শিক্ষকরা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, অনলাইন থেকে অ্যাসাইনমেন্ট নিতে পারবে। তারপর সেটা না পারা গেলে স্কুল থেকে সংগ্রহ করবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে কেউ বাধ্য করতে পারবে না এবং টাকা চাইতে পারবে না। যদি কেউ চায় সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাবেন। অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
শিক্ষাবার্তা/
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে পেজে লাইক দিয়ে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।