মাধ্যমিকের অনেক শিক্ষার্থী পেয়েছে ৩-৪ টি বই বাকী বইগুলো কবে ?
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
করোনার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতায় সঙ্কটে পড়েছে মাধ্যমিক নতুন পাঠ্যবই। বছরের ১৫ দিনের মাথায় প্রাথমিকের ৯৫ ভাগ বই শিক্ষার্থীদের কাছে গেলেও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ের বিশাল অংশ এখনও ছাপাই হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পুরো মেয়াদে ১০ বছর ধরে এই সময়ে শতভাগ পাঠ্যবই শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছলেও এবার সেই অর্জনে ধাক্কা লেগেছে।
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে ‘অল্প কিছু বই’ বাকি আছে। স্পষ্ট পরিসংখ্যানই দিতে পারছে না মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনও মাধ্যমিকের বই পৌঁছায়নি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। সংখ্যায় হবে সাত থেকে আট কোটি। চুক্তি অনুসারে ১৮ জানুয়ারির মধ্যেও সব বই শিক্ষার্থীদের দিতে পারছেন না বহু ব্যবসায়ী।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের কাছে মাধ্যমিকের বইয়ের সব কপি পৌঁছেনি। ১২ দিন ধরে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম চললেও প্রায় অর্ধেক বিষয়ের বই হাতে পেয়েছে বলছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও মাধ্যমিকের বইয়ের সঙ্কটের কথা বলছেন। আবার ইংরেজী ভার্সনের বইয়ের সঙ্কট সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর ইংরেজী ভার্সনের বই তুলনামূলকভাবে পরে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছলেও এবার সেই সঙ্কট আরও দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তা ও বই ব্যবসায়ীরা।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেছেন, ‘অল্প কিছু বই’ বাকি আছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবে। প্রাথমিকের সব বই পৌঁছে গেছে। মাধ্যমিকের যে সামান্য বই বাকি আছে তাও চলে যাচ্ছে। যদিও মাধ্যমিকের কত শতাংশ বই বাকি আছে তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য স্পষ্ট করতে রাজি হননি চেয়ারম্যান। ‘কিছু বই’ বাকি বলে স্বীকার করলেও সেই সংখ্যা কত তার কোন সুনির্দিষ্ট করতে রাজি হননি এনসিটিবির অন্য কর্মকর্তা এমনকি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন সার্ভিসেস বিডি। এতদিন পরিসংখ্যান প্রকাশ করলেও এখন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী বলছেন, ‘১ জানুয়ারির পর আমরা সেই হিসেব রাখি না। এ পরিসংখ্যান দিতে আমাদের না করা হয়েছে।’
রাজধানীর মিরপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছিলেন, আমার স্কুলে প্রাথমিকের বই প্রায় শতভাগ এলেও মাধ্যমিকের প্রায় অর্ধেক বই বাকি। কোন শিক্ষার্থীই সব বিষয়ের বই পায়নি। বারবার জেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করছি; তারা দেব, দিচ্ছি বলছেন। বই এলেই দেয়া হবে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
নির্ধারিত সময়ে সব বই ছাপা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘কিছু বই ছাপার বাকি আছে, আশা করছি, হয়ে যাবে।
পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান সার্বিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এবার নির্ধারিত সময়ে কোনভাবেই বই পাঠানো সম্ভব হলো না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, করোনার ফলে সমস্যাত আছেই। তার ওপর সক্ষমা যাচাই-বাচাই না করে অনেক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া একটি বড় কারণ। আবার এখন কাগজের দাম বৃদ্ধি একটি সমস্যা। প্রতিবছর টেন্ডারের সময়ে তুলনায় পরবর্তীতে কাগজের দাম কমলেও এবার হয়েছে উল্টো। এবার দাম রহস্যজনকভাবে বেড়ে গেছে। কেন বেড়ে গেছে তা দেখা দরকার। অবস্থা এমন যে, পেপার মিল মালিক সমিতির এক নেতাও বইয়ের কাজ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের কাছে তা সরবরাহ করেননি।
তোফায়েল খান আরও বলেন, আমার কাছে যে তথ্য আছে, তাতে প্রাথমিক স্তরের ৯৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৭০ শতাংশ বই সরবরাহ হয়েছে। বাকি বই ছাপার কাজ চলমান রয়েছে। এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বই ৬০ দিনের মধ্যে এবং অন্যান্য বই ৯৬ দিনের মধ্যে সরবরাহ করবে ছাপাখানার মালিকরা। এ হিসেবে সব বই ছাপাতে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে প্রিন্টার্সদের (ছাপাখানা মালিক)। এরপরও শর্তসাপেক্ষে আরও কিছুদিন সময় পাবেন প্রিন্টার্সরা।’
অন্তত ৮ কোটি বই বাকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাধ্যমিকের সব বই পেতে অন্তত আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ লাগবে। এক প্রশ্নের জবাবে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এই মুহূর্তে নোট গাইড বইয়ের কাজে বাইন্ডাররা চলে যাচ্ছে এটাও একটা সমস্যা। ওই কাজে লাভ বেশি। তাই বাইন্ডিংয়ের কাজ যারা করেন তারা পাঠ্যবইয়ের কাজ না করে নোট গাইডের কাজ করছেন।