মাদারীপুরে পৌনে দুইশ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ
মাদারীপুরঃ কোথাও খসে পড়ছে আস্তর, কোথাও মাথার উপরে পড়ছে ইট, সুরকি। ভবনে ফাটল ধরে বেরিয়ে পড়েছে বড় বড় রড। এমন ভবনে বছরের পর বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। মাদারীপুরে পৌনে দুইশ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ, অথচ বার বার নতুন ভবনের আকুতি জানালেও মিলছে না সুরাহা। এমন পরিস্থিতিতে শুধুই আশ্বাসের বাণী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুরের চরনাচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৬ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। ভবন সংকট থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কখনো ভবন থেকে খসে পড়ছে আস্তর, কখনো আবার ইট বা সুরকি। এমন পরিস্থিতি প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে ভয় আর আতঙ্ক। এদিকে ৫ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৬নং পশ্চিম পেয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ে প্রায় ২শ’ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। ভবন না থাকায় একটি কক্ষে একাধিক শ্রেণি থাকায় দাঁড়িয়ে পাঠদানে সমস্যায় পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
পশ্চিম পেয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম বলে, আমাদের একটি রুমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে হয়। এতে অনেক সমস্যা হয়। পাশের ভবনটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নতুন ভবন হলে আমরা নির্ভয়ে পাঠদান করতে পারবো। পশ্চিম পেয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাসিফ খন্দকার বলে, আমাদের বিদ্যালয়ে পুরাতন একটি ভবন আছে সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। একটি কক্ষেই আমাদের দুটি শ্রেণির পাঠদান হওয়ায় আমরা অনেককিছুই বুঝতে পারি না। আমাদের নতুন ভবন দরকার। চরনাচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, আমাদের মাথার ওপড়ে ইট, সুরকি পড়ে। শ্রেণিকক্ষে ক্লাস চলার সময় আমরা আতঙ্কে থাকি। এতে পড়ালেখা ব্যাহত হয়। চরনাচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার বলে, আমাদের মাথার ওপরে ইট, পাথর ও সিমেন্টের গুঁড়া পড়ে। এতে ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করছি আমরা। পরীক্ষার সময় ভয় বাড়ে অনেক।
আমাদের স্কুলে নতুন ভবনের আবেদন করেছি। মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুরের চরনাচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুবেল হাওলাদার জানান, শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি অফিস কক্ষের অবস্থাও করুণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে শিক্ষকরা। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে পাঠদানে আরও গতি বাড়বে বলে প্রত্যাশা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম পেয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না মৃধা বলেন, শ্রেণিকক্ষ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম। আর এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই। যাতে কোমলমতি শিশুরা পাঠদানে আরও মনযোগী হয়। মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, মাদারীপুরের ৫টি উপজেলায় ১শ’ ৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কয়েক বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করে প্রশাসন ও শিক্ষা অধিদপ্তর। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনের নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান না করার জন্যও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নতুন ভবন নির্মাণ করে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়