মশা মারার কোন বাজেট নেই রাবি প্রশাসনের
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ গরমের শুরুতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আবাসিক হল থেকে শ্রেণিকক্ষ বা প্রশাসনিক ভবনের কোথাও স্বস্তি নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মশকনিধনের ওষুধ ছিটানো ও মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আলাদা বরাদ্দ না থাকায় মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের অন্যান্য জায়গার তুলনায় আবাসিক হলগুলোতে মশার উৎপাত বেশি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, হলের ডাস্টবিন, পার্শ্ববর্তী ড্রেন ও আশপাশের ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে এসব জায়গায় মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়ে সহজেই বংশ বিস্তার করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্যারিস রোড-সংলগ্ন যে ড্রেন নির্মাণ হয়েছে ওই সব ড্রেনগুলোতে পানিসহ আবর্জনা জমে রয়েছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ আবাসিক হলের আশপাশে ও নর্দমায় ঝোপঝাড় রয়েছে। সেগুলো পরিষ্কার না করায় মশার উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে।
শের-ই-বাংলা হলের হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন, ‘রিডিং রুম, ডাইনিং ও হল কক্ষের কোথাও কয়েল জ্বালিয়ে রেহাই মিলছে না। টয়লেটগুলোতেও কয়েল নিয়ে যেতে হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, ‘ড্রেন ও মশার প্রজননের জায়গা অপরিষ্কার রাখায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি সকাল বেলা ক্লাসে প্রবেশ করলেও মশার উৎপাত লক্ষ্য করা যায়। জমে থাকা পানির উপর প্রায় মশার লার্ভা দেখা যায়। মশাবাহিত রোগ নিধনে ক্যাম্পাসে নিয়মিত মশকনিধন অভিযান চালানো প্রয়োজন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান হৃদয় বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকে রাত, এমনকি দিনের বেলাও নিস্তার নেই মশার কামড় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এই খাতে বাজেট সৃষ্টি করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।’
মশানিধনে দৃশ্যমান উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইরফান তামিম বলেন, ‘শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগ্রহ নাই প্রশাসনের। তারা এক রাস্তায় তিনটি ড্রেন নির্মাণে ব্যস্ত। অথচ মশানিধনে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না।’
হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দা নুসরাত জাহান বলেন, ‘দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় আমাদের জনবল সংকট তৈরি হয়েছে। তাই নিয়মিত পরিষ্কার করা যাচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান তবিবুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসের সর্বত্র মশকনিধনে কীটনাশক ছিটানো প্রয়োজন। অন্যথায় মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে। এতে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ নানা মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দেখভাল করে স্টুয়ার্ড শাখা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পাসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জনবল খুবই কম। গত কয়েক বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাস যেভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না। তাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে ৩৪ জন এবং শ্রমিক আছে ১২ জন। তারা ক্যাম্পাসের আবাসিক হল, শিক্ষকদের কোয়ার্টার, ড্রেন ও ঘাস কাটাসহ নানা কাজ করে থাকেন। এদের মধ্যে অর্ধেক রয়েছে মাস্টাররুলে চাকরি করেন। পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল না থাকায় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ ড্রেন ও আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন স্টুয়ার্ড শাখার অফিস প্রধান সরদার মো. সোহরাব হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশানিধনে কোনও নির্দিষ্ট বাজেট নেই। তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপকরণ কেনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যে বাজেট দেয়, সেই খাত থেকে কিছু অংশ মশানিধনে ব্যবহার করা হয়। গত বছর মশানিধনে দুটি ফগার মেশিন কেনা হয়েছে এই খাত থেকে। যার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই খাতে বাজেট ছিল ৯ লাখ টাকা। ১ লাখ টাকা কমে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট ছিল ৮ লাখ টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
এদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা শ্রমিকদের মজুরির জন্য ব্যয় হয় একটা বড় অঙ্কের টাকা। এই খাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৫ লাখ টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়। এর পরের বছর ২০২১-২২ সালে সেই টাকা কমে নেমে আসে ২৯ লাখ ৫ হাজার টাকায়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘মশকনিধনের জন্য আমাদের আলাদা কোনও বাজেট নেই। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খাত থেকে মশকনিধনের জন্য একটা অংশ নেওয়া হয়। মশা সৃষ্টির প্রজননস্থলগুলো চিহ্নিত করে সে জায়গাগুলো আমরা ধ্বংস করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ক্যাম্পাসে মশকনিধন অভিযান চালানো হয়েছে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়