ভ্যাট দিলে লটারিতে মিলবে ১ লাখ টাকা :
নিউজ ডেস্ক।।
মো. আখতারুজ্জামান : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আমাদের এনবিআরের একটা ফর্মুলা আছে। যত রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে তত আমরা রেট কমাতে পারব। যত আয় বৃদ্ধি পাবে তত আমরা ভ্যাট কমাতে পারবো। আমরা এখন রাজস্ব বাড়লে ভ্যাটের হার কমবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ ভ্যাট দিলে ব্যবসা চলে না। তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ভ্যাট নিলে গ্রাহক আসতে চায় না। গ্রাহরা বলেন দোকানিরা আমাদের কাছ থেকে ভ্যাট নিয়ে সরকারকে দেয় না। আমাদের কাছ থেকে ভ্যাট নিয়ে তোমরা নিজেদের কাছেই রেখে দাও। আবার দোকানিরা বলে দোকান মালিক সমিতির নেতারা আমাদের কাছ থেকে ভ্যাটে কেটে নিয়ে তারা নিজেদের পকেটে রেখে দেয়।
রহমাতুল মুনিম বলেন, ভ্যাট দিলে ব্যবসা বন্ধ হবে কেন। ভ্যাট দোকান মালিকদের দেয়ার কথা নয়। ভ্যাট তো মালিক তার লাভের অংশ থেকে দিবে না। তার পকেট থেকেও দিচ্ছে না। যে সেবা বা পণ্য ক্রয় করছে সেই ভ্যাট দিচ্ছে। ভ্যাট দোকানিদের বোঝা নয়। আপনাদেরকে বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে এই ভাবনা কেন আসে। এটা আমার মাথায় আসে না। ভ্যাট প্রদান করলে নিজের এবং দেশের উন্নয়ন হয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা এদেশে নাগরিক। দেশের আগে যে ব্যবস্থানে ছিলো এখন যে অবস্থা আছে তাতে আপনার খুশি নন? দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, মানুষের আয় ২০ বছর আগে যে অবস্থানে ছিলো এখন কি সেই অবস্থানে আছে? এটাতে আপনার ভালো লাগে কিনা? আপনি একটি উন্নত ও ডিজিটাল দেশে চান না? আপনি চান যে সর্বচ্ছ শিখায় আমরা আস্তে আস্তে যাই? যদি সেটা চান তাহলে সেটা কি করে সম্ভব? আপনি চান সব কিছু ভালো হোক। কিন্ত আপনি ভ্যাট দিবেন না, ট্যাক্স দিবেন না। আবার সুযোগ সুবিধা চাবেন এটা কি করে সম্ভব। আগে সরকার দিতো সেটা বিভিন্ন দেশ থেকে ধারকর্য করে নিয়ে আসতো।
আপনি কি চান দেশের অবস্থা আগের জায়গায় থাক? সরকার আমাদের জন্য বিদেশ থেকে হাত ফেতে অর্থ নিয়ে এসে আপনাদের উন্নয়ন করুক? আমরা এটা চাই না।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে এখন অভ্যস্থ হচ্ছি। আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করছি। আপনারা চান না ঢাকা শহরের মাটির নিচ দিয়ে গাড়ি চলবে। যাতে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। যাদের ছোট ব্যবসা অল্প আয় তারেদর স্বপ্ন আমার মাথা উপর দিয়ে ট্রেন যাবে। মাটির নিচ দিয়ে গাড়ি যাবে। ঢাকা শহরের ফ্লাইওভারগুলো কি আপনাদের ভালো লাগে না। এখন ঢাকা শহরের জ্যাম কমেছে। এই শহরই তো আমরা দেখতে চাই।
রহমাতুল মুনিম জানান, আমরা এখন মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করছি। আমাদের স্বপ্ন অনেক দূর যেতে হবে। জাতির বড় স্বপ্ন না থাকলে জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা কাজ করতে চাই ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য কাজ করতে চাই।
চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশে যে রাজস্ব আছে তা যদি আসে দেশ উন্নয়ন হবে। ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ীদের যে সমস্যা আমরা এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে ইএফডি মেশিনের ব্যবহার শুরু করে দিয়েছি। গ্রাহকরা ভ্যাট দিবে সরাসরি আমাদের কাছে চলে যাবে। কারণ মেশিনের মাধ্যমে যখন কেউ ভ্যাট দিবে সেখানে কোনো ভুল বুঝাবুঝির সুযোগ নেই। বর্তমানে যাদের ইএফডি মেশিন ব্যবহারকে ঝামেলা মনে করছে তারা জানুয়ারি থেকে কম্ফোর্ট ফিল করবেন। মেশিনের ব্যবহারকে সহজ করতে বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা হবে।
রহমাতুল মুনিম বলেন, ভ্যাটের পরিমাণ বাড়াতে আগামী জানুয়ারি থেকে যেসব ক্রেতা ইফডি মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট দেবেন, তাদের লটারির মাধ্যমে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। ইএফডি মেশিনের মাধ্যমে একটা করে ইনভয়েস জেনারেট হয়। এই ইনভয়েসের একটা ইউনিক নম্বর থাকে। আমরা পরিকল্পনা করেছি জানুয়ারি থেকে ইএফডি মেশিন থেকে যে ইনভয়েস পাব, সেগুলোর ওপর লটারি করব। প্রতি মাসে ইনভয়েসগুলোর ওপর লটারি হবে। সেই লটারিতে আমরা বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার রেখেছি। থাকছে ১ লাখ টাকার পুরস্কার।
লটারিতে প্রাপ্ত অর্থের জন্য ক্রেতা ভ্যাট দিতে উদ্বুদ্ধ হবেন জানিয়ে তিনি বলেন, যখন লটারিতে নগদ অর্থ পাওয়া যাবে তখন একজন কাস্টমার ২-৩ টাকা বেশি দিয়ে ভ্যাট দেয়ার জন্য দ্বিধা করবেন না। তখন তার কাছে ভ্যাট চাপ মনে হবে না। এ কারণে লটারির টিকিট নিতে ক্রেতা ইফডি মেশিন যেসব দোকানে আছে সেখান থেকে কেনাকাটা করবে। এর ফলে যে দোকানে ইএফডি মেশিন নেই সেই দোকানে বিক্রি কমবে। আমরা লটারির বিষয়টা ব্যাপকভাবে প্রচার চালাব।
এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ব্যক্তি ও ছোট ব্যবসায়ীদের পর্যায় থেকে ভ্যাট আদায়ে ইএফডি মেশিনের পদ্ধতির চেয়ে ভালো কোনো পদ্ধতি নেই। এটা আমরা যে কোনো মূলেই বাস্তবায়ন করবো। পর্যায়ক্রমে সব ব্যবসায়ী এই মেশিনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এই মেশিন চালাতে একজন শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন হবে। একজন লোকে কিছুই জানবে না। লেখাপড়া জানবে না। তাহলে তুমি ছেড়ে দাও। অন্য কিছু করো। যেখানে কিছুই লাগে না। এখানে একজন শিক্ষিত লোক চলে আসুক।একজন শিক্ষিত লোক যদি আপনার দোকানে থাকে তাহলে গ্রাহক আগের থেকে বেশি আসবে। সেই হিসেবে এই মেশিন ব্যবহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বৃহস্পতিবার পল্টনের একটি হোটেলে ভ্যাট আদায়ের মেশিন ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস (ইএফডি) ও সেলস ডাটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কমিশনার এসএম হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্ব করেন।
এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. আব্দুল মান্নান শিকদার বলেন, মুসক বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য জানান, প্রযুক্তিতে আমরা অনেক এগিয়ে আছি। এখনও আমরা ব্যবসায়ী পদ্ধতিকে ডিজিটালাইজেশনে নিয়ে আসতে পারিনি একটা দুঃখজনক। তথাকথিত হয়রানি যে একটা অভিযোগ রয়েছে সেটা বন্ধ করার জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। ব্যবসায়ী এবং আমাদের মধ্যে যেন কোনো পার্থক্য না থাকে। আমরা একে অপরের কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করতে চাই।
এনবিআরের সদস্য (মূসক ও নীরিক্ষা) জাকিয়া সুলতানা জানান, বর্তমানে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে প্রায় ১ হাজার মেশিন বসানো হয়েছে। ২০ ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেয়া হচ্ছে। তবে পর্যায়ক্রমে সব প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে। এই পদ্ধিতে সব ব্যবসায়ীকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। যন্ত্রটি চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।