বিষণ্ণতায় ভুগছেন কিশোর
নিউজ ডেস্ক।।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ১০ মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর শারীরিক অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে বিষণ্ণতায় ভুগছেন। স্মরণশক্তিও কিছুটা কমে গেছে। এখন মুক্ত জীবনেও আতঙ্ক তাড়া করছে তাকে। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে।
ছয় মাসের জামিন হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্ত হন। এরপর থেকেই রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
কিশোরের এক স্বজন জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে কারও সঙ্গেই কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। তার কানে প্রচণ্ড সমস্যা। পায়ের অবস্থাও ভালো না। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তার ওপর নির্যাতন করা হয় বলে কিশোর তাদের জানিয়েছেন। ওই নির্যাতনের পর কারাগারেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা মেলেনি।
এতে সমস্যা প্রকট হয়েছে।
ওই স্বজন বলেন, 'কিশোরের শরীরের ক্ষত হয়তো উন্নত চিকিৎসায় সেরে যাবে, চিকিৎসকরাও সেই চেষ্টাই করছেন। কিন্তু তার মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তারা সেটা নিয়েই বেশি চিন্তিত।'
কিশোরের বড় ভাই লেখক আহসান কবির গণমাধ্যমকে বলেন, কিশোরকে ৩০৩ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। এখন ঠিকমতো হাঁটতেও পারে না। কারাগারে থাকার সময় ৯ কেজি ওজন কমে গেছে, ডায়াবেটিসও বেড়েছে।
তিনি জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালের শয্যায় কিশোরের কাছে মোবাইল ফোন দেওয়া হচ্ছে না। তাকে কথাও কম বলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরপরও কিছু কিছু কথা তিনি বলেছেন।
নির্যাতনের বিষয়ে আইনি কোনো প্রতিকার চাইবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে আহসান কবির বলেন, দৈহিক ক্ষতির পাশাপাশি তার ভাইয়ের মানসিক ক্ষতিও হয়েছে। এখন তার ক্ষতগুলো সেরে তোলার দিকেই তারা নজর দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার মুক্ত হওয়ার পর কিশোরকে পাশে বসিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা দেন আহসান কবির। তাতে তিনি বলেন, '৩০৩ দিন জেলে থাকার পর কিশোর আজ মুক্ত হয়েছে। কিশোরের সঙ্গে আজ যার মুক্ত হওয়ার কথা ছিল, সে (লেখক মুশতাক আহমেদ) আমাদের মাঝে নেই। মুশতাক যেন অনেক ভালো থাকে।'
তিনি বলেন, নিপীড়নমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি যত তাড়াতাড়ি বাতিল করা হয় বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য ততই মঙ্গল।
গত বছরের ৫ মে কার্টুনিস্ট কিশোর এবং অনলাইন লেখালেখিতে সক্রিয় ব্যবসায়ী মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। পরদিন 'সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর' অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়। একই মামলায় আরও দুইজন গ্রেপ্তার হন। তবে তারা জামিনে মুক্ত হলেও কিশোর আর মুশতাকের জামিন মিলছিল না। ৬ বার জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারে মারা যান মুশতাক। এরপরই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর মধ্যেই ৩ মার্চ উচ্চ আদালত থেকে জামিন মেলে কিশোরের।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় আইনজীবীর চেম্বারে বসে কিশোর জানান, গত ২ মে বিকেলে কাকরাইলের বাসা থেকে তাকে ধরে নেওয়া হয়। কারা নিয়েছিল তা জানতে না পারলেও ৫ মে র্যাব হেফাজতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মাঝের সময়টুকু তিনি কোথায় ছিলেন তা জানতে পারেননি তিনি। তবে ওই সময় তাকে কয়েক দফায় নির্যাতন করা হয়েছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কিশোর বলেছেন, ১৬ থেকে ১৭ জন এসেছিল তাকে ধরে নিতে। অন্তত চারজনের কাছে ছোট অস্ত্র ছিল। তারা বাসায় ঢুকেই তল্লাশি শুরু করে। বাসায় থাকা সব ডিভাইস তুলে নেওয়ার পর তার হাতেও হাতকড়া পরিয়ে দিয়েছিল ওই ব্যক্তিরা।