বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকের জন্য শুভকামনা
মোঃ মাহমুদুল হাসান (মুক্তা)।।
গত মঙ্গলবার পালিত হলো ২৭ তম "বিশ্ব শিক্ষক দিবস"। শিক্ষকরা যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করতে পারে তা নিশ্চিত করতেই দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষকরা এখনও অবহেলিত। দেশের হাজার হাজার শিক্ষক ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনা সম্মানীতে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান বা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন, আবার ছাত্র-ছাত্রীদের বখাটে স্টাইলের অঙ্গভঙ্গির ও পোশাকের শাসন করলে শিক্ষকদের শাস্তি দেওয়া বা বহিষ্কার করা হয়।
১৯৪৮ সালে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে শিক্ষার অগ্রগতি, মানবজাতির ক্রমোন্নতি এবং আধুনিক সমাজের বিকাশ সাধনে শিক্ষক সমাজের অপরিহার্য ভূমিকা ও অবদানের কথা জোরের সাথে ঘোষণা করে শিক্ষকগণ যাতে এসব ভূমিকা পালনের জন্য উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা ভোগ করতে পারেন তা সুনিশ্চিত করার অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর উদ্যোগে শিক্ষকদের মর্যাদা সম্পর্কে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বিশেষ আন্তঃসরকার সম্মেলন বিশব্যাপী শিক্ষকদের অধিকার, কর্তব্য ও মর্যাদা বিষয়ক আন্তর্জাতিক দলিল ‘ইউনেস্কো/আইএলও সনদ’ স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত দিবসটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত প্রতিটি দেশে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এদিনে "বিশ্ব শিক্ষক দিবস" উদযাপন করা হয়।
জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষকদের মর্যাদা ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা, শিক্ষকদের অধিকার সম্পর্কে জানানো, মানসসম্মত শিক্ষা তথা সকল শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করা এবং প্রবীণ শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাকে জানা ও কাজে লাগানোই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য।
শিক্ষকদের মর্যাদা হওয়া উচিত ছিল সবার ওপরে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষকরা সম্মান ও মর্যাদায় অনেক পিছিয়ে। আবার বেশ কিছু শিক্ষক আছে যারা তাদের সম্মানী টুকুও পায়না। তারা নন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তারা অসহায় শিক্ষক বিনা বেতনে বিনা সম্মানীতে দিনের-পর-দিন ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান বা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশর একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন এসপি, একজন জেলা প্রশাসক, একজন সচিব, একজন প্রধানমন্ত্রী, এমনকি একজন রাষ্ট্রপতিও কোন না কোন শিক্ষকের ছাত্র। বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ সম্মান, সম্মানী ও মর্যাদায় অনেক পিছিয়ে। যেহেতু শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক মেরুদন্ড বা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা পিছিয়ে রেখে অন্যান্য চাকুরীজীবিদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে কোন সময় দেশের কাঙ্খিত উন্নতি ও উন্নয়ন সম্ভব নয়।
দেশের সকল চাকুরীজীবী ও ব্যাক্তিদের ওপরে শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা সকলের ওপরে প্রতিষ্ঠিত করলেই কেবল সেই কাঙ্খিত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। যে সমস্ত শিক্ষক নিরলস ভাবে তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের আদর্শ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সততা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও শুভকামনা রইল।