বিশ্বের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ ভারতের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দায় দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে যেতেন। তাদের অধ্যাপকরা ছিলেন সেই সময়ের এগিয়ে থাকা মানুষ। নালন্দার পথচলা দ্বাদশ শতাব্দীতে থেমে যায়, বলা ভালো থামিয়ে দেওয়া হয়। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
নালন্দার অবদান
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাসবিদদের মতে, এটি বিশ্বের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। নামকরা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যে (বর্তমানে বিহার) অবস্থিত ছিল। পাটালিপুত্র (বর্তমানে পাটনা) থেকে এর দূরত্ব ছিল প্রায় ৯০ কিলোমিটার। পঞ্চম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্মেষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ৯০ লাখ বই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার ১০ হাজার শিক্ষার্থী নালন্দায় পড়াশোনা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দর্শন, ধর্মশাস্ত্র, চিকিৎসা, যুক্তিবিদ্যা ও গণিতশাস্ত্র শেখায়। এ ছাড়া ওই যুগের সবচেয়ে সম্মানিত পণ্ডিতদের কাছ থেকে বৌদ্ধ ধর্মের নীতি সম্পর্কেও জ্ঞানলাভ করতেন শিক্ষার্থীরা। ৭০০ বছরের বেশি সময় ধরে নালন্দা নিজেকে তিল তিল করে গড়ে তোলে। ওই পুরো সময়ে এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে একটাই ছিল। যুক্তরাজ্যের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড বা ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় বোলোনিয়া নালন্দা প্রতিষ্ঠার ৫০০ বছরের বেশি সময় পর প্রতিষ্ঠিত হয়। দর্শন ও ধর্মশাস্ত্রকে নালন্দার শিক্ষকরা এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যা এশীয় সংস্কৃতি গড়তে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এমনকি নালন্দা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরও সেই সংস্কৃতির প্রভাব দীর্ঘদিন গোটা মহাদেশে বিরাজমান থাকে। বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় যারা নির্মাণ করেছিলেন অর্থাৎ গুপ্ত সাম্রাজ্যের সম্রাটরা কিন্তু বৌদ্ধ না, বরং ধর্মপ্রাণ হিন্দু ছিলেন। তা সত্ত্বেও তারা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাদের সাম্রাজ্যে ওই সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের ক্রমবর্ধমান প্রসারকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখেছিলেন। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রতি বৌদ্ধদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও তাদের দার্শনিক রচনা গুপ্ত সম্রাটদের মুগ্ধ করে। উদার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় চর্চা গুপ্তদের শাসনামলে বিকশিত হতে থাকে। এ ঐতিহ্যই নালন্দার বিভিন্ন বিভাগের একাডেমিক পাঠ্যক্রমের মূলভিত্তি, যেখানে উচ্চতর জ্ঞানের সঙ্গে বৌদ্ধদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। আয়ুর্বেদ প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থার একটি অংশ। রোগ নিরাময়ের জন্য আয়ুর্বেদ পুরোপুরিই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। নালন্দায় আয়ুর্বেদ নিয়ে পড়ানো হতো এবং সেখানকার শিক্ষার্থীদের হাত ধরে এই চিকিৎসাব্যবস্থা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
নকশা
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের নকশা ছিল একেবারেই ভিন্ন। উন্মুক্ত চত্বরের চারদিকে ছিল শ্রেণি ও প্রার্থনা কক্ষ। স্বতন্ত্র এই নকশা সে সময় অনুপ্রাণিত করে বৌদ্ধদের অন্যান্য সংস্থাকেও। এ ছাড়া নালন্দার ভবনগুলোর দেয়ালের চমৎকার প্লাস্টার থাইল্যান্ডের স্থপতিদের প্রভাবিত করেছিল। পাশাপাশি তিব্বত ও মালয় উপদ্বীপে নালন্দার মেটাল আর্টের প্রভাব দেখা যায়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল বহু মঠ। সেসব মঠের ভেতরে আয়তাকার উন্মুক্ত চত্বরের একদিকে ছিল পাথরের উঁচু প্লাটফর্ম, তাতে থাকত শিক্ষকের পোডিয়াম। ওই চত্বরে ৩০০-এর মতো ছাত্র বসার ব্যবস্থা ছিল। ভারতের পাশাপাশি আফগানিস্তানসহ দূরের নানা দেশ থেকে পড়তে যাওয়া ছাত্রদের জন্য ছিল ছোট কক্ষ। সেসব কক্ষে মুখোমুখি তাকের একটিতে তেলের প্রদীপ ও অন্যটিতে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখতে পারতেন ছাত্ররা। এ ছাড়া প্রতিটি কক্ষের প্রবেশমুখের কাছে বর্গাকৃতির ছোট গর্ত থাকত। গর্তগুলো ছাত্ররা চিঠির বাক্স হিসেবে ব্যবহার করতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
আজকের যুগে যেকোনো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নালন্দায়ও ভর্তি হওয়া সহজ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়টির জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের সামনে ভর্তি ইচ্ছুকদের ইন্টারভিউ দিতে হতো। সেসব ইন্টারভিউয়ে অধ্যাপকরা তাদের কঠিন ও জটিল প্রশ্ন করে নাস্তানাবুদ করতেন। যারা প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারতেন, তাদের পড়ানোর দায়িত্বে থাকতেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা একদল অধ্যাপক। এ ছাড়া ধর্মপাল, শীলভদ্রের মতো ওই যুগের প্রখ্যাত বৌদ্ধ অধ্যাপকরাও ছাত্রদের পাঠদান করতেন। ধারণা করা হয়, ভারতীয় গণিতের জনক হিসেবে বিবেচিত আর্যভট্ট ষষ্ঠ শতাব্দীতে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ভারতের আদিত্য বিরলা সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গণিত বিভাগের অধ্যাপক অনুরাধা মিত্র বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আর্যভট্টই প্রথম ব্যক্তি, যিনি সংখ্যা হিসেবে ‘শূন্য’কে ব্যবহার করেন। তার এই বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গাণিতিক গণনা অনেক সহজ করে এবং বীজগণিত ও ক্যালকুলাসের জটিল সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। শূন্য না থাকলে কম্পিউটার আসতই না।’ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতচর্চা দক্ষিণ ভারত ও আরব উপদ্বীপে গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিকাশে সহায়তা করে। ওই বিশ্ববিদ্যালয় তার সেরা অধ্যাপক ও পণ্ডিতদের নিয়মিত চীন, কোরিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাত। উদ্দেশ্য, বৌদ্ধ দর্শন ও চিন্তার প্রচার। প্রাচীনকালের এই সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এশিয়াজুড়ে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে সহযোগিতা করে।
চীনের বিখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পর্যটক শুয়ানসাং নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পরে তিনি সেখানে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে শুয়ানসাং দেশে ফেরেন। সে সময় তিনি নালন্দা থেকে মালবাহী গাড়িতে করে ৬৫৭টি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ চীনে নিয়ে যান। শুয়ানসাংকে বিশ্বের প্রভাবশালী বৌদ্ধ পণ্ডিতদের একজন বিবেচনা করা হয়। তার সম্পর্কে বলা হয়, ‘এমন এক ভিক্ষু যিনি বৌদ্ধ ধর্মকে পূর্বে নিয়ে যান’, কারণ নালন্দা থেকে দেশে নিয়ে যাওয়া বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের কয়েকটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন তিনি। শুয়ানসাং বিশ্বাস করতেন, গোটা বিশ্ব মানব মনের প্রতিনিধি ভিন্ন আর কিছু নয়। তার এই মতবাদ তার জাপানি শিষ্য দোশো জাপানে প্রচার করেন। চীন ও জাপানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রধান ধর্মে পরিণত হওয়ার পেছনে শুয়ানসাং ও দোশোর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
নালন্দার বর্ণনা দিতে গিয়ে শুয়ানসাং তার লেখায় গ্রেট স্তূপ নামে এক বৌদ্ধ স্তূপের উল্লেখ করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের ঘনিষ্ঠ এক শিষ্যের স্মরণে ওই বিশাল স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি দেখতে অনেকটা অষ্টভুজাকার পিরামিডের মতো। মুম্বাইয়ের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইতিহাসের শিক্ষক অঞ্জলি নায়ার বলেন, ‘গ্রেট স্তূপ আসলে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে নির্মাণ করা হয়। সম্রাট অশোক এটি তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মাণ করেছিলেন। পরে ৮০০ বছরে বেশ কয়েকবার ওই স্থাপনা পুনর্নির্মাণ করা হয়। নকশাও বদলানো হয়। গ্রেট স্তূপের আশপাশের ছোট স্তূপে বৌদ্ধ ভিক্ষু যারা নালন্দার জন্য পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের দেহাবশেষ সমাহিত আছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর হামলা
দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় জ্বালিয়ে দেয় তুর্কি-আফগান জেনারেল বখতিয়ার খিলজির নেতৃত্বে একদল সেনা। ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল দখলের সময় খিলজি চেয়েছিলেন, নালন্দার মতো অগ্রসর একটি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। নালন্দার ক্যাম্পাস এতটাই বিশাল ছিল যে, আক্রমণকারীরা যখন সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়, সেই আগুন নিভতে তিন মাস সময় লাগে। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটকরা এখন গেলে তারা যে ২৩ হেক্টরের খনন করা এলাকা দেখতে পান, তা বিশ্ববিদ্যালয়টির আদি ক্যাম্পাসের খুব ছোট্ট একটি অংশ। তবে মঠ ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের মাঝখান দিয়ে হাঁটার সময় তারা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারবেন, এক সময় ক্যাম্পাসটি কী পরিমাণ বিশাল ও এর পরিবেশ কতটা মনোরম ছিল।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ছিল তালপাতায় লেখা লাখ লাখ পাণ্ডুলিপি। ওই লাইব্রেরিকে বৌদ্ধদের জ্ঞানের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। লাইব্রেরিটি মোট তিনটি ভবন নিয়ে নির্মিত ছিল। তার মধ্যে নয়তলাবিশিষ্ট এক ভবনকে তিব্বতের বৌদ্ধ পণ্ডিত তারানাথ ‘মেঘকে স্পর্শ করা ভবন’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। বখতিয়ার খিলজি ও তার বাহিনী যখন নালন্দায় হামলা চালায়, সে সময় হাতেগোনা কয়েকটি তালপাতা ও ভাঁজ করা কাগজের বই সঙ্গে করে নিয়ে পালিয়ে যান মঠের সন্ন্যাসীরা। সেসব বই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মিউজিয়াম অব আর্ট ও তিব্বতের ইয়ারলাং মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
আট শতাব্দীর বেশি সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। বখতিয়ার খিলজি ও তার সেনাদের এটি ধ্বংসের কারণ নিয়ে মতভেদ আছে পণ্ডিতদের মধ্যে। তাদের বড় অংশই মনে করেন, নালন্দার পাঠদান পদ্ধতি ইসলাম ধর্ম প্রচারে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই ভাবনার জায়গা থেকে আক্রমণকারীরা বৌদ্ধ ধর্ম নির্মূলের লক্ষ্যে ওই কাজ করেছিলেন। তবে ভারতের স্বনামধন্য প্রত্নতাত্ত্বিক এইচ ডি সানকালিয়া এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। ১৯৩৪ সালে তিনি তার দ্য ইউনিভার্সিটি অব নালন্দা বইয়ে লেখেন, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দেখতে অনেকটা দুর্গের মতো ছিল। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনেক ধন-সম্পদ ছিল বলেও গুজব রটেছিল। এসব কারণে আক্রমণকারীরা মনে করে থাকতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করলে সেখান থেকে অন্য জায়গায় হামলা করা সম্ভব হবে।’ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় খননকালে গৌতম বুদ্ধের ব্রোঞ্জের মূর্তি, ভাস্কর্যসহ আরও অনেক কিছু উদ্ধার করা হয়। সেসব সংরক্ষিত আছে অনসাইট মিউজিয়ামে। ওই মিউজিয়ামের পরিচালক শঙ্কর শর্মা বলেন, ‘আক্রমণকারীরা কেন হামলা করেছিল, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে খিলজিই প্রথম আক্রমণ করেননি। পঞ্চম শতাব্দীতে হুন শাসক মিহিরাকুলা সেখানে প্রথম হামলা করেন। এরপর অষ্টম শতাব্দীতে গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক নালন্দায় হামলা চালিয়ে বেশ ক্ষতিসাধন করেন।’
হুনরা লুটপাটের জন্য নালন্দায় হামলা চালালেও গৌড়রাজ শশাঙ্ক কেন সেখানে হামলা চালিয়েছিলেন, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, রাজা শশাঙ্কের আমলে হিন্দু ও বৌদ্ধদের মধ্যে টানাপড়েন বৃদ্ধি পায়। এরই জেরে শশাঙ্ক নালন্দায় হামলা চালান। ওই দুই হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির ভবনগুলো সংস্কার করা হয় এবং তৎকালীন শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হয়। শঙ্কর শর্মা বলেন, ‘দ্বাদশ শতাব্দীতে খিলজি যখন জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান নালন্দায় হামলা চালান, সে সময় ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার পড়তির দিকে ছিল। পাল বংশের বৌদ্ধ রাজারা অষ্টম শতাব্দী থেকে নালন্দার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পাল সাম্রাজ্যের পতন ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হ্রাস এই দুই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খিলজি যখন নালন্দায় হামলা চালান, তখন তা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্তিত্বের ওপর চূড়ান্ত আঘাত। সেই তৃতীয় হামলার পর নালন্দা আর দাঁড়াতে পারেনি।’ পরের ছয় শতাব্দী ধরে নালন্দা নিঃশব্দে কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে থাকে। ১৮১২ সালে ফ্রান্সিস বুকানন-হ্যামিল্টন নামে স্কটল্যান্ডের এক জরিপকারী বিহারে জরিপ চলাকালে মাটির নিচে বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি স্থাপনার হদিস পান। পরে ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম নিশ্চিত করেন, ওই স্থাপনাগুলোই প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন। ২০১৬ সালে ওই প্রতœতাত্ত্বিক স্থানকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়