বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার এক পরীক্ষায় ভর্তির প্রস্তাব
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতে সমন্বিত ভর্তি বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হলেও প্রকৃত অর্থে কষ্ট কমছেই না। একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। এবার খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গুচ্ছ পরীক্ষা নিয়ে জানালেন তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তার মতে, একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেয়া উচিত, অন্যথায় কষ্ট কমবে না।
অন্য দিকে এখন যে পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির নামে শিক্ষার্থী বাছাই করা হচ্ছে তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি নিজেও। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। পদ্ধতির অসামঞ্জস্য দূর করতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বানও জানান শিক্ষামন্ত্রী। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০ সাল থেকে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রথমে কথা ছিল সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় এই গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।
কিন্তু প্রথম বছরেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের দোহাই দিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা থেকে সরে যায়। ফলে প্রথম বছরের গুচ্ছ পরীক্ষার সুফল থেকে বঞ্চিত হয় লাখো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। পরের বছর থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে যুক্ত করা হয় নানা শর্ত। ফলে দুর্ভোগ কমানোর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। শুরু থেকেই বিতর্ক উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন আগে থেকেই। সব সময়েই শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে মূলত তিনটি বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। প্রথমটি ছিল সেকেন্ড টাইম ভর্তির সুযোগ না দেয়া। তিনি বলেন, আমরা জীবনব্যাপী শিক্ষার কথা বলছি আবার শিক্ষার্থীদের সামনে দেয়াল তুলে দিচ্ছি। শিক্ষার্থীরা কেন একবার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাবে?
ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার সুযোগ না থাকা অযৌক্তিক। আমরা এটি ভুলে যাই যে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে তারা নিজেদের মেধার মাধ্যমেই সুযোগ পাচ্ছে। তা হলে একবারের বেশি কেন সে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাবে না? দ্বিতীয় আক্ষেপের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা এক বিষয়ে পড়ার পর অন্য বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাই না। আইন বিষয়ে পড়ার পর আমি চাইলে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ব, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার পর আমি চাইলে সাহিত্য নিয়ে পড়ব, কিন্তু কেন আমি পড়তে পারব না। আমাদের কেন দেয়াল তুলতে হবে? শিক্ষামন্ত্রীর তৃতীয় আক্ষেপ হলো শিক্ষার পরিবেশ বিবেচনা না করে আমরা শুধু শিক্ষার্থী ভর্তি করে যাচ্ছি। কত বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারছি, সেটি নিয়ে ব্যস্ত আমরা। সমাবর্তনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে সুন্দর একটি সার্টিফিকেট তুলে দিচ্ছি।
কিন্তু এই সার্টিফিকেট সে তার জীবনে কতটা কাজে লাগাতে পারছে, কর্মজগতে তার শেখাটা কত ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারছে, সেটি দেখা আমাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কাজেই আমাদের কর্মজগতের চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের পরই একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার নানা শর্ত আর কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার কারণে শিক্ষার্থীর পরিবারের সবাইকেই নানাভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাই একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রস্তাব করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম।
রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গতকাল বুধবার উচ্চশিক্ষায় অ্যাক্রেডিটেশন বিষয়ক সম্মেলন এবং অ্যাক্রিডিটেশন প্রক্রিয়ার উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব করেন। প্রফেসর দিল আফরোজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আমরা একটি কমন পরীক্ষা নিতে পারি। এ পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থী নির্বাচন করব। তারা নিজেদের মেধাক্রম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হবে। একই প্রক্রিয়া শিক্ষক নিয়োগেও অনুসরণ করা যেতে পারে। এ জন্য আমরা একটি ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি গঠন করতে পারি। তারা এই পরীক্ষা নেবে।