বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাইলে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে কিভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেসব পরামর্শ নিয়ে ইত্তেফাকের সঙ্গে কথা বলেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) গণিত বিভাগের নবনিযুক্ত প্রভাষক মো. সজিব। গ্রন্থনা করেছেন ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা যোবায়ের ইবনে আলী।
নিজের লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে
পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাকরির দুটি ধারা পরিলক্ষিত হয়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুবা বিসিএস, সরকারি বা বেসরকারি চাকরির পড়াশোনা।নিজের ভালোলাগার ওপর প্রাধান্য দিয়ে নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে প্রথমে স্থির হতে হবে। এরপর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
মানসম্পন্ন সিজিপিএ অর্জন করতে হবে
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইউজিসি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সিজিপিএ-৩.৫০ স্থির করা হয়। তবে সিজিপিএ ভালো থাকলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভালো সুবিধা পাওয়া যায়। স্ট্যান্ডার্ড বিবেচনায় ৩.৭৫ এর ওপরের সিজিপিএ থাকলে একজন শিক্ষার্থী নিজের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন।
অধ্যয়নরত বিষয় সম্পর্কে ভালো দখল থাকতে হবে
ভালো রেজাল্ট করা আর কোনো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। অনেকসময় একজন শিক্ষার্থী নিজের মুখস্থ শক্তির ওপর ভর করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে অধ্যয়নরত বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে একটি বিষয়ের ওপরে অনেকগুলো বই পড়ে বিষয়টি আয়ত্ত করতে হবে।গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে রাখতে হবে।অর্জিত এই জ্ঞানগুলো হবে তার সারাজীবনের পুঁজি। তাই অধ্যয়নরত বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান আয়ত্তে রাখতে হবে।
পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে
সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলো একজনকে আরেকজন থেকে এগিয়ে রাখে। যেমন কেউ একজন ডিবেট করলে সে শ্রেণীকক্ষে যেকোনো একটি বিষয় সবার সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারবে। একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীরা তার ক্লাসে বেশি মনোযোগী হবে। এছাড়াও সুযোগ থাকলে বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতে হবে। এসবে ভালো ফলাফল একজনকে অনেকটাই এগিয়ে রাখে।এছাড়াও বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখলে একজন পরোপকারী, বন্ধুবৎসল ও সহমর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। একজন আদর্শবান শিক্ষক হওয়ার পূর্বশর্ত তাকে মানবিক হতে হবে।
গবেষণার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে হবে
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গবেষণার সুযোগ খুব সীমিত। নিজেকে এগিয়ে রাখতে হলে এই বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণার যাবতীয় বিষয়ে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য সব শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার ওপরে ইনসেন্টিভ দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে। এমন উদ্যোগ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান থাকলে গবেষণার একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি হবে।
হতাশ না হয়ে লক্ষ্যে অটুট থাকতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় চাকরির ক্ষেত্র খুব সীমিত হওয়ায় এখানে প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। তাই এটি কখনো কখনো সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। এই সময়টাতে কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। এই সময়ে পরিবার বা সমাজের দিক থেকেও নানা চাপ আসে। তাদেরকে 'উচ্চশিক্ষিত বেকার' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সময়টিতে ধৈর্যধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অথবা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিজেকে নিয়োজিত রেখে প্রস্তুত করতে হবে। ফলে ভালো একটি অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। পরপর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। হাল না ছেড়ে, লক্ষ্যে স্থির থেকে যথাযথ পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়