বিনোদন কেন্দ্র আছে : তুমি নাই
।। ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন ।।
ইউনিসেফের তথ্যমতে বাংলাদেশ ছাড়াও ১৩টি দেশে ১ বছরের অধিক সময় লাগাতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে অব্যাহতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাধারে ১ বছরের অধিক সময় বন্ধ। এই মূহুর্তে বাংলাদেশে সংক্রমন হার অনেক বেশি-প্রশ্ন আসত যদি স্কুল কলেজ খোলা থাকত তবে তাকে সবাই দায়ী করত। ব্রিটেন বা ইউরোপে যেখানে স্কুল কলেজ খোলার পর সংক্রমন বেড়েছে তখন তারা বলেছে খোলার কারণে এমন হয়েছে। তবে গবেষকরা এর কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পায়নি।
কেরোনা সহজে বিদায় নিচ্ছে না-একথা আর দেরী করে বলে লাভ নেই। জাতিসংঘ বলছে মৌসুমী রোগ হিসাবে এটি পৃথিবীতে বিরাজ করতে পারে। এমন যদি হয় তাহলে প্রশ্ন-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি তাহলে খোলা আর সম্ভব হবে না? গত ২৯ মার্চ ১৮টি নির্দেশনা দিল সরকার। তাতে বিনোদন কেন্দ্র সীমিত আকারে খোলা থাকার ঘোষণাও রয়েছে। কিন্তু হতভাগা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তুমি নিরবে বন্ধ থাক। বিশ্রাম কর। তোমার ছেলেরা আগামীর নয়-এখনের নয়। তারা তখনের হয়ে ঘুমিয়ে থাকুক।
বইমেলা তুমিও জেগে থাক। বিয়ে, মেজবান তুমি খেয়ে যাও। আর হরতাল-সমাবেশ, প্রতিরোধ-প্রতিশোধ, বিদেশী মেহমান, আপ্যায়ন তুমি চলতে থাক। কারণ সব করোনা সোনালী অধ্যায় গুলোর জন্য। করোনার বাগান কিন্তু স্কুল-কলেজ। এমনভাবে স্কুল-কলেজে করোনা বাসা বেধেছে এটি চিরতরে এখানেই থাকবে। এটিই আরামের জায়গা। নিরাপদে থেকো করোনা। ঝামেলা করোনা!!!!
কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার পূর্বের মতই টিউশন ফি, ভর্তি ফি ও অন্যান্য ফি নিয়েই ছেড়েছে। তাহলে করোনার কারণে আরো বহু বছর এই প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ থাকলে কার কি? কিন্তু জিডিপি বা অথনৈতিক ক্ষতির যে হিসাব-সেখানে তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে সূদুর প্রসারী যে ক্ষতি তার হিসাব তুলে ধরা হয়নি। তাহলে? তাহলে অসুবিধা কি? আরে বেকুব-অসুবিধা কি? তুমি বুঝবে কি?
আর অনলাইনে ক্লাস? কে করে? কতজন? হিসাবটা দিন তো? যারা এই লিখাটি পড়ছেন তারাই বলুন? এতে কি হচ্ছে? কারা পাচ্ছে? কতগতিতে পাচ্ছে? বলাও যাবে না। ভাবমূর্তির বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়?
নিম্ন আয়ের সন্তানরা কাজে যোগ দিয়েছে। বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। মুঠোফোনে আসক্ত হয়েছে। বড় ভাইয়ের সাথে কিশোর গ্যাং জমজমাট হয়েছে। নানা নতুন দল গঠন। হরতালে ফিকেটিং-বাহ। দারুণ সব সম্ভাবনার কথাই শুনছি সব বলা কঠিন। ভাবমূর্তি খুব ঠুনকো? ঘায়ে লাগলে হিসেব করবে আমাকে নিয়ে। এতসব সমস্যার মধ্যে যারা স্কুলে ফিরবে তাদের শিক্ষার মান ও ভয়ের জায়গা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি অবস্থায় দাঁড়াবে ভাবুন তো?
অনেক পাগলের মুখে শুনি খোলার পর একটু বেশি পড়িয়ে নিলে এইসব পুষিয়ে যাবে। আরে বাবা!! শিক্ষা কি তাহলে পড়া, পরীক্ষা আর জিপিএ? একটা গাঁধার সমাজে যেন চলে এসেছি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এদের একটা উচিত শিক্ষার ক্লাস করিয়ে দিই। শিক্ষা হল সামাজিক, মানবিক ও ইতিবাচক দিক গুলোর উম্মেষ ঘটানো এই গাঁধা গুলো এইসব কি আসলে জানে না?? নাকি আমাদের গাঁধা ভাবে?
দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে যে সংকট তৈরী হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠার কোন যন্ত্র নাই। সম্ভবও না। করোনার টিকা ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে দেয়ার ব্যবস্থা করা হউক। মে মাসে খোলার যে কথা ইতিমধ্যে বলা হয়েছে-তা কার্যকর করা হউক। ১ বছরের পড়ালেখা, সামাজিকতা ও মননের যে ক্ষতি হয়েছে তার বিষয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসুন। ভাবুন এই দেশের জন্য কাদের রেখে যাচ্ছেন? স্বপ্নের বাংলাদেশ তারাই-তাদের ক্ষতি করে কেউ ভালো কিছু পাবেন!!-পাবেন না?
লেখক-
Owner and Founder at Residential Model School & College, Chittagong.