বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫০, চতুর্থ শ্রেণিতে নেই একজনও
পাবনাঃ ঘড়িতে তখন সকাল সোয়া ৯টা। সময় অনুযায়ী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ততক্ষণে পাঠদান শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ঝিনাইগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তখনো কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। সেখানে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেও কারো দেখা পাননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ডিডি) শেখ মো. রায়হান উদ্দিন।
গত রবিবার (১৮ জুন) উপজেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন বিভাগীয় ওই কর্মকর্তা। ভাঙ্গুড়া উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষায় অব্যবস্থাপনার প্রমাণ হাতেনাতে পেয়েছেন তিনি। পরে বিষয়টি উপজেলা পরিষদের শিক্ষাবিষয়ক মিটিংয়ে তুলে ধরেন ডিডি রায়হান উদ্দিন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের কর্মকতারা এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ঝিনাইগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর চরম সংকট রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীও নেই। এখানে সবমিলে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে মাত্র ৫০ জন। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক আছেন পাঁচজন। বিদ্যালয়টি বেসরকারি থাকা অবস্থা থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন আব্দুল হাই।
এদিকে প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষকেরই বিদ্যালয়ে কোনো জবাবদিহি নেই। যেমন খুশি বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন তারা। প্রধান শিক্ষকের অদক্ষতার কারণেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নত হয়নি বলে অভিযোগ করেন একাধিক অভিভাবক।
ঝিনাইগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি উপজেলা শহরের থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। বিদ্যালয়টি যে ক্লাস্টারের অন্তর্ভুক্ত, তার তত্ত্বাবধান করেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাসান আলী। তিনিও এই বিদ্যালয়টি তেমন পরিদর্শন করেন না বলে জানা গেছে।
সকাল ৯টার মধ্যে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হলেও ঝিনাইগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আসেন পরে। এ কারণে ছাত্র-ছাত্রীরাও হাজির হয় দেরিতে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক স্বচক্ষে দেখলেন এমনি একটি বিদ্যালয়।
ঝিনাইগাড়ি গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা হয় না। তাই ছেলে-মেয়েরা পার্শবর্তী কলকতি ও শরৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে থালাবাসন ধোয়ানোসহ অপ্রয়োজনীয় কাজ করানো হয় বলে প্রচার রয়েছে। এজন্য অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকদের প্রতি ক্ষুব্দ।
উপ-পরিচালক শেখ মো. রায়হান উদ্দিন বলেন, রাস্তার সঙ্গে বিদ্যালয়টি দেখতে পেয়ে তিনি সেখানে যান। কিন্তু সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্কুলে একজন শিক্ষককে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাসান আলী বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যদি তারা সন্তোষজনক উত্তর প্রদানে ব্যর্থ হন তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কিছুদিন থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তিনি স্কুল মনিটরিং ও পরিদর্শনে নজর দিতে পারেননি। তবে ঈদের পর তিনি এসব বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান উন্নয়নে স্বচেষ্ট হবেন বলে জানান।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। সরকারি ও অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলো চলছে কি না, তা নিশ্চিত করবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। যে সব স্কুল অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে সেখানে তিনি সংশ্লিষ্ট অফিসারের তদারকি বাড়াতে ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়