বিএনপির ২৭ দফা রুপরেখায় যা থাকছে
পরপর দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী না থাকা, সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠন, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ উপস্থাপন করেছে বিএনপি।
আজ সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি আয়োজিত সুধী সমাবেশে এ রূপরেখার বিস্তারিত তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতা, বিশিষ্ট নাগরিক, গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ অনেকে অংশ নেন।
সোমবার বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই ওয়েস্টিনের হল পূর্ণ হয়ে যায়। পরে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা ইসলাম, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
বিরোধী দলগুলোর মধ্যে গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সায়ীদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াসহ বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর অনেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
যা আছে এই ২৭ রূপরেখায়-
১. একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গৃহীত সকল অযৌক্তিক, বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ রহিত/সংশোধন করা।
২. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক Rainbow Nation প্রতিষ্ঠা করা।
৩. একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
৪. রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা।
৫. পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
৬. বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘উচ্চ কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা।
৭. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা।
৮. বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা।
৯. সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা।
১০. বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা।
১১. একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করা।
১২. মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা।
১৩. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনও আপস না করা। অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা।
১৪. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। Universal Human Rights Charter অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা।
১৫. বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা।
১৬. ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন।
১৭. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা।
১৮. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা।
১৯. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া।
২০. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা।
২১. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা।
২২. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা এবং তাঁদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান।
২৩. যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা।
২৪. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া।
২৫. চাহিদা ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া।
২৬. ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের NHS এর আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা।
২৭. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।