বায়ুদূষণে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বিশ্বের ১১৭টি দেশ, অঞ্চল ও ভূখণ্ড এবং ছয় হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুর মান বিশ্লেষণ শেষে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক দূষণ প্রযুক্তি সংস্থা আইকিউএয়ার একটি তালিকা প্রকাশ করে। বায়ুতে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম- ২.৫) বা বস্তুকণার ২.৫ মানের ওপর ভিত্তি করে এ বিশ্লেষণ করা হয়। আইকিউএয়ারের ২০২১ সালের তালিকায় টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশের তকমা পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্বের শীর্ষ দূষিত রাজধানীর তালিকায় দ্বিতীয় ঢাকা।
পিএম- ২.৫ এর উপস্থিতি নির্ধারিত সীমার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি
সুইস সংস্থা আইকিউএয়ার বলছে, গত বছর বাংলাদেশের বায়ুতে প্রাণঘাতী পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম- ২.৫ এর উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ; যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশে পিএম- ২.৫ এর উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ছিল যথাক্রমে ৯৭ দশমিক ১, ৮৩ দশমিক ৩ ও ৭৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম।
বিশ্বজুড়ে ৭০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি
বায়ুদূষণ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি। প্রতি বছর বিশ্বে ৭০ লাখের বেশি প্রাণহানি ঘটে বায়ুদূষণের কারণে। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন— ক্যানসার ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে পিএম- ২.৫। আইকিউএয়ার বায়ুতে পিএম- ২.৫ এর যে উপস্থিতি পেয়েছে, তা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে সতর্ক করে দিয়েছে।
নেমে আসবে বড় বিপর্যয়
এভাবে বায়ুদূষণ চলতে থাকলে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে— এমন শঙ্কা পরিবেশবিদদের। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বায়ুদূষণ যে একটা বড় সমস্যা, এটা সরকার বিশ্বাস করে না। সরকারকে এটা বিশ্বাস করতে হবে। তারা (সরকার) হয়তো মানবিক বিপর্যয় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছে, যা ইতোমধ্যে আসা শুরু করেছে।আবর্জনা পুড়ে সৃষ্ট ধোঁয়া বাতাস বিষাক্ত করে তুলছে
তিনি বলেন, এটা বড় সমস্যা, সমাধান না করলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। যেসব কারণে বায়ুদূষণ হয়, তা চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে। অতীত থেকে জানতে হবে, কীভাবে বায়ুদূষণ হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে বায়ুদূষণ না হয়, সেজন্য কাজ করতে হবে।
যা বলছেন পরিবেশমন্ত্রী
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে মেট্রোরেলসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ করার সময় ধুলোবালি ওড়ে। সে কারণে বায়ুদূষণ হয়। বৃষ্টিপাত শুরু হলে আবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
তিনি বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনকে বলেছি। তারা জার্মানি থেকে পানি ছেটানোর জন্য একটা মেশিন আনছে। এছাড়া মেট্রোরেলসহ যারা উন্নয়নমূলক কাজ করছে, আমরা তাদের নোটিশ করেছি। তারা যেন দেখে-শুনে কাজ করে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমরা বলেছি, নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। অযথা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না, পানি ছিটাতে হবে।
ইটভাটা আগের তুলনায় অনেক কমেছে— এমন দাবি করে শাহাব উদ্দিন আরও বলেন, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণে অনেক ইটভাটা ছিল। অনেকগুলো আমরা বন্ধ করেছি। রাস্তায় পুরাতন গাড়ির চলাচল বন্ধের বিষয়ে আমরা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে বলেছি।