বাকি খাইয়ে নিঃশ্ব হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন ডাইনিং পরিচালক
জাককানইবি সংবাদদাতা:
গত তিন বছর ধরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা ছাত্র হলের ডাইনিং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তারা মিয়া। হল ডাইনিং পরিচালনা করে প্রায় দশ লাখ টাকা বাকি খাইয়ে নিঃশ্ব হয়েছেন তিনি। এবারে ‘নেতাদের চাপে’ হল থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলেও যেতে হয়েছে তাকে।
জানা যায়, দুই কাঠা জমি বিক্রি করে ডাইনিংয়ের দায়িত্ব নেন তারা মিয়া। ২০২০ সাল থেকে গত তিন বছরে তার ডাইনিং পরিচালনা করতে গিয়ে বাকী পড়েছে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যেখানে ২০২২ সালেই বাকী পড়েছে ২ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) শূন্য হাতে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন তিনি।
বাকীর টাকা তোলার আশায় ডাইনিং পরিচালনা করে গেলেও ‘নেতাদের চাপে’ তাকে ডাইনিং ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলেও জানান তারা মিয়া। তারা মিয়া বলেন ’২ কাঠা জমি বিক্রি করে ডাইনিং পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বাকী খাইয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। হল প্রভোস্ট আমাকে ডাইনিংয়ে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের চাপে আমাকে ডাইনিং ছাড়তে হলো। আমি জমিও হারালাম, ডাইনিংও হারালাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘একেকজন সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাকী খেয়েছে। যারা বাকী খেয়েছে তাদের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীও আছে। তবে অনেক রাজনৈতিক নেতা এবং অনেকে নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে বাকী খেয়েছেন। বাকী না দিতে চাইলে বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধামকিও করেছে। ’
নেতাদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন তো নেতা দুইজনই। ছাত্রলীগের সভাপতি (নজরুল ইসলাম বাবু) আর সাধারণ সম্পাদক (রাকিবুল হাসান রাকিব)। এই দুইজনের নাম ভাঙিয়েই আমার এত টাকা বাকি খেয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘প্রথমে সে আমাকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা বাকির কথা বলেছে। এখন শুনতে পারছি বাকি প্রায় দশ লাখ। যেটি আমার কাছে মিথ্যাচার মনে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তার কাছে বাকির তালিকা চেয়েছিলাম, কিন্তু সে দেয়নি। তালিকা দেখালে আমার নাম ভাঙিয়ে যারা বাকি খেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব।’
সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব বলেন, তারা মিয়া চুক্তি ছাড়া হল প্রশাসনের সাথে ব্যাবসা করেছে। এখন এই ঝামেলা তার এবং হল প্রশাসনের মধ্যকারের বিষয়। আমি ব্যাক্তিগতভাবে তারা মিয়ার কাছে বাকির বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। এবং তাকে বলেছি, যারা বাকি খেয়েছে তাদের নাম আমাদেরকে দিলে আমরা টাকা তুলতে তাকে আরো সহায়তা করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪ টি হলের ডাইনিংয়ের মধ্যে তারা মিয়ার ডাইনিংয়ের খাবার সবচেয়ে মানসম্মত হতো বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান জানান- ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কম দামে ভালো খাবার দিয়ে আসছিল তারা মিয়া। অন্যান্য হল থেকে এবং আশেপাশের মেস থেকে অনেকে এখানে খেতে আসতো। এমনকি অনেক শিক্ষকরাও এখান থেকে খাবার নিয়ে খেতেন। তাকে অত্যন্ত ভালো মানুষ হিসেবেও আমরা জানি। ’
লোক-প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা ভাই অগ্নিবীণা হল ডাইনিং এর পরিচালক, সে একজন অসহায় মানুষ, আমাদের কাছে তার বাকি টাকা গুলো নৈতিক মূল্যবোধ থেকে দিতে হবে।’
এ বিষয়ে অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কল্যানাংশু নাহা বলেন, ’যে পরিস্থিতিতে তারা মিয়া চলে যাক সেটা সময় এবং ঘটনার ফলে ঘটেছে। তারা-মিয়ার কাছে যারা খেয়েছে কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকে হলেও তার বাকীটা পরিশোধ করে দেওয়া হোক।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৫/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়