বাংলাদেশে আইন কাজ করে না : আনু মুহাম্মদ
নিউজ ডেস্ক।।
অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ প্রতি বছর এবং প্রতি মাসে এখানকার সাংস্কৃতিক জোট এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষ যে প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছেন ত্বকী হত্যার বিচারের জন্য যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন, উচ্চারণ করে যাচ্ছেন, বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছেন। তার সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য আছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর এ অদম্য কর্মসূচির ভূমিকা রফিউর রাব্বী ও তার সহযোদ্ধারা যেভাবে করছেন সেটা শুধু ত্বকী হত্যার বিচারই নিশ্চিত করবে না। এটা সারা দেশে সব খুন, গুম, নির্যাতন, নিপীড়নের মানুষের যে আন্দোলন সেই আন্দোলনে একটা অসাধারণ প্রতীক হয়ে থাকবে। অসাধারণ প্রেরণা হয়ে কাজ করবে, করছে। সেজন্য সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ ত্বকী হত্যার বিচারের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক হত্যার বিচারের দাবি মানুষের সামনে নিয়ে আসছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে শহরের ডিআইটি এলাকায় সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের উদ্যোগে
মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৮ বছর উপলক্ষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যারা উপস্থিত সবারই ঘরে শিশু-কিশোর আছে। সবারই আত্মীয়স্বজনের মধ্যে শিশু-কিশোর আছে। আমরা যেখন শিশু-কিশোর দেখি তখন একটি আদরের, ভালোবাসার অনুভূতি হয়। একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে শুধু শুধু একটি শিশু-কিশোরকে বকাবকি করা বা মারধর তো দূরের কথা তাকে ধমক দেওয়া বা বকা দেওয়া কোনো স্বাভাবিক মানুষের কাজ হতে পারে না। সেটা স্বাভাবিক মানুষের বৈশিষ্ট্য। ত্বকী সেখানে এরকম একজন কিশোর। সেই কিশোরকে তুলে নিয়ে গেল। শুধু তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করল না, তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করল। নির্যাতন করে খুন করল। যাদের প্রতি ত্বকীর কোনো ভূমিকা নেই। ত্বকী তাদের কোনো বকা দেয়নি, ত্বকী তাদের কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি। অথচ কিছু লোক সংঘবদ্ধভাবে তাদের অর্ধেক বয়সের কম বয়সি একটা ছেলেকে ক্রমাগত আক্রমণ, নির্যাতন করে হত্যা করেছে। কীভাবে সম্ভব। যে কেউ চিন্তা করেন এটা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব। কতটা পাষন্ড হলে, কতটা নির্দয় হলে, কতটা অমানুষ হলে, কারও পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব। সেটাই নারায়ণগঞ্জের এ খুনিরা করেছে। তারা শুধু ত্বকীকে নয়, এ ধরনের খুনের অভিজ্ঞতা তাদের আরও আছে। তারা খুন করে, গুম করে, তারা জালিয়াতি করে, প্রতারণা করে, দখল করে, লুণ্ঠন করে, চাঁদাবাজি করে, ধর্মকে ব্যবহার করে। তারা নিজেদের ধার্মিক বলে পরিচয় দেয় অথচ তারা ধর্মের নামে মিথ্যা কথা বলে। ধর্মের নামে মানুষের ওপর নির্যাতন করে। ধর্মের নামে মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়। সব কিছুই তারা করে। সুতরাং তারা মানুষ কার্যত নয়। কিন্তু এরাই সমাজের ক্ষমতাবান যারা তাদের কাছে প্রিয় পাত্র। তাদের পক্ষে কি করে কিছু মিডিয়া, ক্ষমতাবান লোক কীভাবে তাদের পক্ষে থাকতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি তার স্বজনদের হারিয়েছেন একটি ভয়ঙ্কর ঘটনার মধ্য দিয়ে। তিনি কী করে এরকম পাষ- পরিবারের, খুনি পরিবারের পক্ষে সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে পারেন। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পরে এ বিচার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান আসলে কাজ করে না। বাংলাদেশে আইন কাজ করে না।
তিনি বলেন, সরকার ও খুনিদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, অনেক বিচার জমে গেছে। এ বিচার বাংলাদেশের মানুষ করবে। জনতার আদালত যে রায় দেবে, সে রায় রাষ্ট্রকে, সরকারকে বাস্তবায়ন করতেই হবে। তখন আমরা রায় পাব। সেটা ত্বকীর ক্ষেত্রে হবে, সাগর-রুনি, তনু সবার ক্ষেত্রে হবে। এ বিচার না করলে মানুষের কাছে বাংলাদেশকে ফেরত আনা যাবে না। বাংলাদেশ এখন বেদখল। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর মানুষ একটি দেশ পেয়েছিল। কিন্তু সেই দেশ এখন বেদখল হয়ে আছে। বেদখল হয়ে আছে লুটেরা ও দখলদারদের হাতে, ধর্ষকদের হাতে, নির্যাতকদের হাতে, ডাকাতদের হাতে, সম্পদ পাচারকারীদের হাতে এবং দেশি-বিদেশি দুষ্টু চক্রের হাতে। সেই দেশকে আমাদের হাতে আনার জন্য আমাদের সেই শক্তি অর্জন করতে হবে। সেই শক্তি অর্জনের মধ্য দিয়ে একদিন জনতার আদালতে যে রায় সেটা বাস্তবায়ন হবে।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী জানেন কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে। তার কাছে সব কাগজপত্র আছে। সব কিছু জেনেও যে কিছুই করছেন না এ অপরাধ তো তার। এর দায় তাকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, যে সব লোক ত্বকীকে তুলে নিয়ে গেছে, এ ধরনের লোকেরাই বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের উপর ত্রাস সৃষ্টি করছে। ত্বকী নিহত হয়েছে ৮ বছর আগে। সেই ত্বকীর পরে আমরা প্রতিবছর যখন স্মরণ করি, প্রতিবছর ত্বকীর সঙ্গে একেকটা নাম যোগ হয়। এটা হচ্ছে আমাদের উন্নয়নের ধরন।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, সিপিবি জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম প্রমুখ।
পরে সন্ধ্যায় ডিআইটি থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের উদ্যোগে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে মিছিলটি চাষাঢ়া শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকালে ত্বকী শহরের শায়েস্তাখান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। পরে ৮ মার্চ সকালে চাড়ারগোপে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে তার লাশ পাওয়া যায়। ত্বকী হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে ৮ জনই পলাতক। আর ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে দুইজন আসামি ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু এ হত্যাকা-ের ৮ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।