বশেমুরবিপ্রবি: অনশন স্থগিত করে উপাচার্যের বাসভবনে তালা
গোপালগঞ্জঃ গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক ও উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়ে আমরণ অনশন স্থগিত করেছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ।
অনশনে ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ ওই ৫ শিক্ষার্থীকে গোপালগঞ্জ আড়াই শ’বেড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছ। অসুস্থ ওই ৫ শিক্ষার্থী হলো ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের কবির হোসেন ও মাহাবুব জামান, তৃতীয় বর্ষের আব্দুল আল মামুন, আতিকুজ্জামান ও শান্ত সাহা।
শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা সোমবার (৭ আগস্ট) আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের তৃতীয় দিনে গতকাল (বুধবার) রাত ৮টায় তারা একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে ও উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসে শিক্ষার্থীরা।
৪র্থ দিনে সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে আনশন কর্মসূচী স্থগিত ঘোষণা করেন।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ১ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। তাই শুধু ভর্তি কার্যক্রম চলছে বলে জানয়েছেন রেজিষ্ট্রর মোঃ দলিলুর রহমান।ওই কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ইউজিসি সম্মতি দিয়েছে।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাত্র ৪ জন শিক্ষক রয়েছে। তার মধ্যে ২ জন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। বাদ বাকী ২ জন শিক্ষক আমাদের ২শ’ ৫০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিতে পারছেন না। আমাদের বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। তাই আমরা শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে অনশন শুরু করেছি। গত সোমবার ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জানান মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যাবেন। আমাদের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। আমরা গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। এর মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত ডকুমেন্ট দিতে হবে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়। তারা ব্যর্থ হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেব এবং আমরন অনশনে বসবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মোঃ দলিলুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে গতকাল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি আরো বলেন, অনিবার্য কারণবসত আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ১ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু ভর্তি কার্যক্রম চলছে।
দ্বিতীয় দিনের বৈঠকটি সফল দাবি করে ওই কর্মকর্তা বলেন, আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে ইউজিসি প্রয়োজনীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করবে। তারপরই আমরা বিধি মোতাবেক ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারব। আশা করছি এরমধ্য দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে।
ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের আন্দোলনরত ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ আলী তোহা বলেন, আমরা বুধবার রাত থেকে আমরন অনশনে বসেছি, ৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স এনে অসুস্থ ওই ৫ শিক্ষার্থীকে গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছি । আমাদের একটাই দাবি আমাদের বিভাগে শিক্ষক চাই।
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন,ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে তৃতীয় বারের মতো আন্দোলনে করছি। এর আগে আমরা চলতি বছরের ৭ মে প্রথম দফায় আন্দোলন করি। তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছিলো ১ মাসের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে ৭ জুন দ্বিতীয় দফায় আন্দোলন শুরু করি। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে লিখিত ভাবে আমাদের আশ্বস্ত করে। প্রতিবার আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা তাদের দেওয়া কোন প্রতিশ্রুতি রাখেনি।
ওই বিভাগের শিক্ষার্থী আছানউল্লাহ বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি। আমাদের দাবি না মানলে ১৬ আগস্ট থেকে আমরা আন্দোলনে যাব।
জানা যায়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে সোমবার (৭ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে উপাচার্যে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। ওই দিন শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলকে ডেকে নেন উপাচার্য এবং শিক্ষক দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন,"ইউজিসি থেকে শিক্ষক নিয়োগের একটা প্রক্রিয়ায় আছে সেগুলা মেইনটেইন করে শিক্ষক পেতে অন্তত দেড় মাস সময় প্রয়োজন। এই সময়টা আমাকে দিতে হবে।" কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা না মেনে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পুনরায় বিকাল ৪ টায় উপাচার্য আন্দোলনস্থলে আসেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।
ওই সময় উপাচার্য শিক্ষার্থীদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ইউজিসির সাথে বৈঠক করবেন। শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন। গতকাল ( বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ( ইউজিসি) বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপরে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরন অনশনে বসে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়