।। বিন-ই-আমিন ।।
বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিবছর এপ্রিল মাসে উপকূলীয় জেলা সমূহে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এবছর সেই প্রকোপ মহামারি আকার ধারণ করেছে। এমনি করোনার মহামারির উপর ডায়রিয়ার প্রকোপ যেন মরার উপর খাঁড়ার গা হয়ে দেখা দিয়েছে বরিশাল বিভাগে। চলতি বছরের সাড়ে তিনমাসে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজার। ডায়রিয়া পরিস্থিতি মহামারি থেকে অতিমরিতে রুপ নিলে ১১ জন মারা যায় বিভিন্ন জেলায় । সুস্থ্য হয় প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার। বিগত ২ যুগেও ডায়রিয়ার অতিমরিতে এতোলোক আক্রান্ত ও মৃত্যু বরণ করেনি। সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল ভোলা জেলায়।
ভোলা জেলায় এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৮ শ ৯৯ জন ডায়রিয়া রোগী আক্রান্ত হয়। ২য় অবস্থানে আছে পটুয়াখালী। পটুয়াখালীতে ৮ হাজার ৭ শ ২৭জন ডায়রিয়া রোগী।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী শিক্ষা বার্তা ডটকমকে জানান, কিছু দিন আগে ডায়রিয়া পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ ছিল। হাসপাতালে কোনো জায়গা ছিলোনা। রোগীদের বারান্দায়ও থাকতে হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে ডায়রিয়ার প্রাদূর্ভাব আমাদের ভাবিয়ে তুলেছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে ২০৪ জন এবং সুস্থ হয়ে বাসায় গিয়েছেন ১৯৩ জন। এ জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে ডায়রিয়ায়। তবে বর্তমানে ডায়রিয়ার চিকিৎসা সামগ্রীর কোনো সমস্যা নেই।
করোনা পরিস্থিতির ব্যাপারে তিনি জানান,গতকাল সরকারি নির্দেশ অমান্য করার দায়ে ২৪ টি মামলায় ২২ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। করোনা সুস্থ্য রোগী ১ হাজার ৮শ ৭৮ জন ও গতকাল মৃত্যু বরণ করেন ১ জন। জেলায় মোট করোনা সনাক্ত রোগী ২ হাজার ৮৬ জন।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান,ডায়রিয়া ও করোনা দুটোই নিয়ন্ত্রণে আছে পিরোজপুরে। গত ২৪ ঘন্টায় ৩৩ জন ভর্তি হলেও সুস্থ্য হয়ে বাড়ি গেছেন ১ শ১১ জন। হাসপাতালে ১০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমাদের পর্যাপ্ত স্যালাইন ও অন্যন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম আছে।
করোনা পরিস্থিতিও ভালো আছে পিরোজপুরে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫ শ ৬১ জন আক্রান্ত হলেও এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩১ জন। বর্তমানে ১৭৫ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ভোলা জেলায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৭৬ টি টিম কাজ করছে বলে জানান,জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ কেএম রেজাউল ইসলাম। তিনি জানান গত ২৪ ঘন্টায় ৩২৮ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। করোনায় ৩২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায়। ১ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, লকডাউনের ১২ তম দিনে ১৭ টি মামলায় ১০ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান,তার জেলার ডায়রিয়া পরিস্থিতি এখন মোটামুটি ভালো। গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ও ভর্তির সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে ঝালকাঠিতে। আমাদের পর্যাপ্ত স্যালাইন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির ব্যাপারে তিনি শিক্ষা বার্তা ডটকমকে জানান, আমাদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়। গতকালও ১৭ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে। কিছু দিন এ সংখ্যা কম থাকলেও গতকাল বেড়েছে। তিনি আরো জানান, ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি করোনা পজিটিভ এবং আমার গাড়িচালক ও দেহরক্ষীও করোনায় আক্রান্ত।
ডায়রিয়া সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী। তিনি জানান, শুকনো মওসুমে পানি এবং স্রোতধারা কমে যাওয়ায় পরিস্কার পানির অভাব। কিছু দিন আগে নদীর পানি লবনাক্ত হওয়ায় ডায়রিয়া জীবাণু বেঁচে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। কারন জীবাণু লবনাক্ত পানিতে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে। বৃষ্টি না হলে এই জীবাণু সহজে নষ্ট হবেনা। নদীর পানি ও লবনাক্ত পানি যতদুর সম্ভব ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।