বরখাস্ত হওয়া প্রভাষক এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
নিউজ ডেস্ক।।
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার চাঁন্দপুর গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজ থেকে নানা অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া প্রভাষক মো. পলাশ ভূঁইয়া বর্তমানে এ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঐ উপজেলার আরও দুটি কলেজে শিক্ষকতা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া তথ্য গোপন করে তিনি অবৈধভাবে কলেজটির একটি কমিটি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়াসহ প্রতিষ্ঠাতার নাম বাদ দিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন।
এসব বিষয়ে কলেজটির ১৮ জন দাতা সদস্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিলের পর গত দেড় মাসেও তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়নি। এদিকে কমিটি, অধ্যক্ষ এবং একই কলেজের তিন জন প্রতিষ্ঠাতার পালটাপালটি সাইনবোর্ড নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে কলেজটির সার্বিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবক ও এলাকার শিক্ষানুরাগীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন।
কলেজ কমিটির সাবেক সভাপতি ও আজীবন দাতা সদস্য অভিযোগকারী ফারুক আহমেদ মৃধাসহ ৯ জন সদস্য ও ৯ দফা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলেমেয়েদের উন্নত শিক্ষার জন্য এলাকার ১৯ জন শিক্ষানুরাগী কলেজটি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের জন্য ১৫৪ শতক জমি ও নগদ ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকা দান করেন। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এ কে এম হাবিবউল্লাহ।
২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি এই কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন আবদুর রশিদ। এ সময় এই কলেজে কর্মরত অবস্থায় উপজেলার মীর আবদুল গফুর ডিগ্রি কলেজ এবং দ্য রয়েল ইন্টারন্যাশনাল কলেজে প্রভাষক (বাংলা) পদে চাকরি করাসহ নানা অভিযোগে প্রভাষক মো. পলাশ ভূঁইয়াকে ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই এ কলেজ থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়। কিছু লোকের সহায়তায় তিনি কলেজে অবস্থান নেন এবং জাল কাগজপত্র তৈরি করে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদবি ব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখছেন। এতে কলেজটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বিষয়ে ১৮ জন সদস্যের স্বাক্ষরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে গত ৯ মার্চ অভিযোগ দাখিল করা হয়। কিন্তু ঐ অভিযোগের তিন মাসেও তদন্ত না হওয়ায় গত ১৪ জুন বোর্ডে আরো একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
এসব অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে মো. পলাশ ভূঁইয়া জানান, তিনি ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কলেজের বৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এমন কোনো চিঠি তিনি পাননি। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা মর্মে এ কে এম হাবিবউল্লাহর নামে কোনো কাগজপত্র এই প্রতিষ্ঠানে নেই। মোহাম্মদ আলী সরকার ও আবুল কালাম আজাদ সরকার নামে দুই জনের কাগজপত্র পাওয়া গেছে, তাই তাদের প্রতিষ্ঠাতা উল্লেখে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এছাড়া এই কলেজ এমপিওভুক্ত নয়, এখানে যত্সামান্য বেতন পাই। গত জুন মাসে মীর আবদুল গফুর ডিগ্রি কলেজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। তবে তদন্তে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে মেনে নেব।’
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, ‘কলেজটির ১৮ জন দাতা ও আজীবন দাতা সদস্যের স্বাক্ষরিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ২০ জুন জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনো পাইনি। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
কুমিল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল মজিদ বলেন, ‘অভিযোগ তদন্তের জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে চিঠি পেয়েছি। করোনার কারণে তদন্ত কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে।’