বন্ধের নির্দেশনা সত্ত্বেও খোলা কোচিং সেন্টার
ঢাকাঃ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে সম্পন্ন করতে এবং ‘প্রশ্ন ফাঁসের অপচেষ্টা বা গুজব রুখতে’ ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় সরকার। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানছে না কোচিং সেন্টারগুলো। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে গুরুত্ব না দিয়ে খোলা রয়েছে এসব কোচিং সেন্টার।
জানা গেছে, ৩০ এপ্রিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুকে কেন্দ্র করে গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কমিটির সভা ডাকেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
কিন্তু সরেজমিন ঘুরে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর কোচিংয়ের হাট বলে পরিচিত সব স্পটেই খোলা রয়েছে কোচিং। ফার্মগেট, গ্রিন রোড, মিরপুর, বেইলী রোড, শনির আখড়া, আজিমপুর সব জায়গাতেই একাডেমিক কোচিংগুলোতে ক্লাস চলছে আগের মতোই। এমনকি গোপনে কিছু কোচিং সেন্টার এসএসসি পরীক্ষার্থী ব্যাচের ক্লাসও চালু রেখেছে। অন্য ক্লাসের কোচিংয়ের আগে সকালবেলা তাদের কোচিং হয়। এমনও দেখা গেছে, ভবনের দেয়ালে সরকারি নির্দেশনা ঝোলানো; কিন্তু ভেতরে চলছে কোচিংয়ের ক্লাস। এর পাশাপাশি খোলা রয়েছে চাকরির প্রস্তুতির কোচিং ও ভর্তি কোচিং।
কোচিং সেন্টার চালু রাখার বিষয়ে তাদের যুক্তি—করোনাভাইরাসের সময় দীর্ঘদিন কোচিং বন্ধ থাকায় ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন তারা। এখন নিয়মিত কোচিংয়ের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এক মাসের বেশি সময় কোচিং বন্ধ ছিল। এর পরই শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। সে কারণে আরও এক মাস বন্ধ থাকবে স্কুলগুলো। এ কারণে কোচিং বন্ধ থাকলে তারা খরচ জোগাতে হিমশিম খাবেন। কোচিং রুমের ভাড়া, কর্মচারী ও শিক্ষকদের বেতন ঠিক সময়ে যেন দিতে পারেন, সেজন্য তারা কোচিং খোলা রেখেছেন।
সরেজমিন রাজধানীর মিরপুর এলাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজ সংলগ্ন এলাকাগুলোতে কোচিং সেন্টার খোলা থাকতে দেখা গেছে। এসব কোচিং সেন্টারে সকাল ৭টা থেকে সকালের শিফট
এবং বিকেল ৩টা থেকে বিকেলের শিফট করে কোচিং চলছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে চলছে এসব কোচিং সেন্টার।
জানতে চাইলে মিরপুর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ নম্বর শাখার পাশে পরিচালিত জিএসকে কোচিং সেন্টারের পরিচালক মিরাজুল হক সুমন বলেন, আমাদের কোচিংয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোনো ব্যাচ নেই। তবে অন্য শ্রেণির সব ব্যাচের ক্লাস চলছে। নিয়মিত ব্যাচের পাশাপাশি আমরা চুক্তিভিত্তিকও স্টুডেন্ট ভর্তি করাই। সরকারি নির্দেশনা তো প্রতিবছরই থাকে। কেউই তো মানে না।
ফার্মগেট এলাকার তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, হলিক্রস কলেজ, বটমলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তেজগাঁও মডেল হাইস্কুল সংলগ্ন কোচিং সেন্টার খোলা থাকতে দেখা গেছে।
রেডন একাডেমিক অ্যান্ড অ্যাডমিশন কেয়ারে গিয়ে দেখা যায়, তাদের অফিস কক্ষ খোলা রয়েছে। কারণ, জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, কোচিংয়ের নিজস্ব কিছু কাজ থাকায় তারা খোলা রেখেছেন। তবে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, একাডেমিক ক্লাস চলছে।
জানতে চাইলে রেডন একাডেমিক অ্যান্ড অ্যাডমিশন কেয়ারের স্বত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম খলিল কোচিং খোলা রাখার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ফার্মগেটে সবাই কোচিং খোলা রেখেছে। দেশে বেকারের সংখ্যা কম নয়। চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে বা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে অনেকে কোচিংয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে হয় কোচিংয়ের টাকা দিয়ে। সে কারণে বাধ্য হয়েই তাদের খোলা রাখতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো ধরনের ব্যাকআপ ছাড়াই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের কারণে কোচিং বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস যদি অফলাইনে হয়, অনলাইনেও তো বিশাল প্ল্যাটফর্ম, সেখানে যারা পড়াচ্ছে, তাদের মাধ্যমেও তো প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে। সেটা বন্ধ কেন করছে না? তাদের বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেই কেন?
জানতে চাইলে কনফার্ম একাডেমিক কেয়ারের স্বত্বাধিকারী ও অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন বাংলাদেশের (অ্যাসেব) ফার্মগেট জোনের সভাপতি এম জি মোস্তফা পাটোয়ারী বলেন, আমরা সবাইকে কোচিং বন্ধ রাখতে বলেছি। কিন্তু মাসের শুরু হওয়ায় অনেকে গোপনে হয়তো কোচিং চালু রেখেছেন। তিনি বলেন, যারা ফ্রিল্যান্সার (প্রাইভেট ব্যাচ পড়ায়), তাদের তো কোনো স্কুল নেই। কোচিংই একমাত্র আয়ের উৎস। দুই মাস স্কুল বন্ধ থাকছে। ফ্রিল্যান্সাররা কোচিংয়ের আয়ে ঘর ভাড়া দেন, নিজের সংসার চালান। সে কারণে অনেকে কোচিং খোলা রেখেছেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন বাংলাদেশের (অ্যাসেব) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আকমল হোসেন বলেন, আমরা কোচিং বন্ধ রাখার পক্ষে। আমরা স্পষ্ট বলে দিয়েছি, কেউ কোচিং খোলা রাখলে, কোনো সমস্যা হলে তার দায় তাকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা না মেনে কোচিং খোলা রাখলে কী ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। তবে আমাদের সংগঠন রেজিস্টার্ড না হওয়ায় অনেকেই নির্দেশনা মানতে চায় না।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়