বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার টানে প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
মোঃ হুসাইন আহমদ।।
বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। সেই ছোট্টবেলায় যাদের সাথে গোল্লাছুট, কপালটোকা খেলেছি; এখন তাদের খুব করে মনে পড়ে। শৈশবের শিক্ষা, যৌবনের শিক্ষা আর এই শিক্ষাজীবনের একটি মারহালা পেরিয়ে সবাই পাড়ি জমায় নানান জায়গায়। আর নিজের জীবনকে সাঁজাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে কর্মব্যস্ততায়। কিন্তু তারপরেও ভুলা যায় না বন্ধুদের নিয়ে খামখেয়ালি কথা, বিকেলের সেই পায়চারির কথা, চায়ের দোকানে বসে আড্ডাবাজির কথা, মজা করে মুড়ি খাওয়ার কথা। যৌবনে এসেই মূলত একজন ছাত্রের জীবনে সেরা বন্ধুত্বটি গড়ে ওঠে। আর এই বন্ধুদের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তই যেন অমূল্য হয়ে ধরা দেয় স্মৃতির পাতাগুলোয়।
প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 'জামিয়া ইসলামিয়া দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা। টাঙ্গাইল শহরের বেবীষ্ট্যান্ডের তীরঘেঁষে বিশাল মাঠ নিয়ে সবুজ সমারোহে গড়ে ওঠা বিদ্যাপীঠ। বন্ধুত্ব বিষয়টা মূলত উপলব্ধি করতে শিখেছি এখানে এসেই। সবুজের সান্নিধ্যে থাকা এখানকার প্রতিটি মানুষজন/সাথীরা বন্ধুবাস্থল। খুব সহজেই মিশতে পারে। এদের কাছেই তো শিখেছি কিভাবে মানুষকে কাছে টেনে নিতে হয়, বিপদ-আপদে কাঁধে-কাঁধ রেখে পাশে থাকতে হয়। আর তাই প্রিয় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সব সময়ই থাকবে। শিক্ষাজীবনে সবারই কমবেশি বন্ধু বা সাথী থাকে। আর বন্ধুরা থাকলে হবে দেখা, হবে কথা, হবে অনাবিল আড্ডা-আনন্দ, না বলা বহু কথা। এটাই তো স্বাভাবিক।
আর যাদের বন্ধু নেই তারা স্বাভাবিকভাবে বিষণ্নতায় ভোগে, একাকিত্ব তাদের গ্রাস করে নেয় সবদিক থেকে। ছন্দহীন জীবনে ছন্দ আর নিরানন্দ জীবনে আনন্দের জোয়ার যোগ করতে তাই বন্ধুদের জুড়ি নেই। আবার সে বন্ধুদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়াটাও সবচেয়ে কষ্টের। শৈশব জীবন, শিক্ষা জীবন ও পরবর্তী জীবনের দিনগুলোতে সে চিত্রই চোখে পড়ে সর্বত্র। হাসি-কান্নার ঐদিনগুলো সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে, যোগাযোগ না থাকলেও মনের দূরুত্ব তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারপর চলে যায় সবাই। ঢুকে পড়ে পেশাদারিত্বের কর্মব্যস্ততায়। কিন্তু সেজীবন থেকে পালিয়ে ফিরতে আবারো বন্ধুদের সাথে অল্পকিছু সময় পার করতে নানান পথ খুঁজতে থাকে সবাই। প্রতিষ্ঠানের দিনগুলোতে সেই পুরোনো বন্ধুদের সরব উপস্থিতি তাই সকলকে বেশ আনন্দ দেয়।
সত্যি! হাসি-কান্নার সেই সোনালি দিনগুলো জীবনে মনে পড়ার মতই। অনেক বন্ধু পেয়েছি শিক্ষা-জীবনে। অনেক সুন্দর ছিল দিনগুলো। প্রতিদিন সকালে বসে পড়তাম ক্লাসে। সারাদিন ক্লাস আর ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা, কত আড্ডা। বিকালে চায়ের দোকানে বসে চায়ের আড্ডা । কতকিছু নিয়ে সে আড্ডা, যেন শেষই হতো না। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার দিনগুলোও খুব মিস করার মত। যদিও সবার সাথে আর আগের মতো দেখা হয় না। তবে সুযোগ পেলেই ছুটে আসি প্রিয় প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তারা সবাই নেই। অনেকেই হারিয়ে গেছে পেশাদারিত্বের নিজ নিজ গন্তব্যে। তবুও যাদের সাথে দেখা হলো প্রিয় প্রতিষ্ঠানে, লুৎফর ভাই, জাকারিয়া ভাই ও নাজমুল ভাই!
ঐদিনটি যদিও পেরেশানির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করেছে। ফলে দিনশেষে সবাই মিলে ঘুরতে গেলাম লুৎফর ভাইদের বাসায়। সেখানে সবাই মিলে আড্ডা, মজা ও আনন্দ-ফুর্তি করলাম। অনেক দিন পর এক সাথে হয়ে অনেক অনেক মজা করলাম।আলহামদুলিল্লাহ।
অতঃপর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিনগুলো অনেক মিস করি। তখনকার প্রতিটা দিনই ভালোবাসায় নতুনভাবে শুরু হতো, নতুন ঘটনাচক্রে, নতুন অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে। হাসি-কান্না, আড্ডাবাজি, আনন্দ-বেদনা, সবকিছু মিলিয়েই ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিনগুলো। ক্লাসের ফাঁকে যখনই বিরতি থাকতো, তখনই ভালোবাসার বন্ধুরা মিলে মেতে উঠতাম আড্ডায়, ঘুরতে যেতাম কোনো এক প্রিয় জায়গায় । সত্যি বলতে! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিনগুলো ও বন্ধুগুলো বড্ড মিস করি। বড্ড মিস করি। এই বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাটুকু আল্লাহর জন্য হয়। আর তা বেঁচে থাকুক আজীবন। আমিন সুম্মা আমিন।
লেখক-
শিক্ষার্থী, ইফতা, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল।
আলেম ও প্রাবন্ধিক, চৌহালী, সিরাজগঞ্জ।