বদলি প্রথার আগে যে সব সমস্যার সমাধান চায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি প্রথা চালু অত্যাবশ্যক সন্দেহ নাই।এটি দরকার ও বটে।এটি কার্যকর হলে অনেক শিক্ষকের খরচ যেমনি সাশ্রয় হবে,পরিবারের সাথে বাস করার সুযোগ ও তৈরি হবে। কোন সন্দেহ নাই, পেশাগত গতি বৃদ্ধি করতে , দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় চাকুরি করার কারনে একর্গুঁয়েমি দূর করতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রুপিং বন্ধ করতে, পরিবার পরিজনের কাছাকাছি থাকতে, শিক্ষকদের মানসিক প্রশান্তি ধরে রাখতে ও অল্প বেতনের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য বদলি প্রথা জরুরি দরকার এবং অত্যাবশ্যক।
কিন্তু মনে রাখতে হবে বদলি প্রথার পর কিছু সমস্যা ও শুরু হবে।
ক• ধরে নিলাম একজন শিক্ষক যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন তার চাকুরীর বয়স আট বছর পূর্ণ হওয়ার সুবাদে তিনি জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে ঐ প্রতিষ্ঠানে সহকারি অধ্যাপক/জৈষ্ঠ্য প্রভাষক হয়েছিলেন।কিন্তুু যে প্রতিষ্ঠানে তিনি বদলি হবেন সে প্রতিষ্ঠানে তার থেকে বেশি সময় ধরে চাকরি করা আরেকজন প্রভাষক ১:১ ঘৃনিত প্রথা চালু থাকায় সহকারি অধ্যাপক/জৈষ্ঠ্য প্রভাষক হতে পারেনি।ফলে আগের প্রতিষ্ঠানে দশ বছর চাকরি করে তিনি যদি তার থেকেও বেশি চাকরি করা কিন্তু সহকারি অধ্যাপক /জৈষ্ঠ্য প্রভাষক থেকে বঞ্চিত শিক্ষকের প্রতিষ্ঠানে আসেন তাহলে সেটি অগ্রহনযোগ্য হবে সন্দেহ নাই।
অন্যদিকে এটি জনবল কাঠামো ২০২০(সংশোধিত) এবং আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রবিধান ২০২০ এর আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হবে।জনবল কাঠামো ২০২০(সংশোধিত) ও আরবি বিশ্ব: প্রবিধান ২০২০(সংশোধিত) মতে প্রভাষকদের মধ্যে ৮ বছর পূর্ণ হওয়া প্রভাষক গন ১:১ প্রথা অনুযায়ী সহকারি অধ্যাপক/জৈষ্ঠ্য প্রভাষক হবেন।ফলে বদলি প্রথা চালুর আগেই ১:১ প্রথা বাতিল বাতিল করে সকল প্রভাষকের জন্য ৮ বছর ফূর্তিতে সহকারি অধ্যাপক/জৈষ্ঠ্য প্রভাষক প্রথা চালু রাখতে হবে।।
খ• বদলি প্রথা চালু হলে মফস্বল এলাকার অনুন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা আর্থিক সুবিধার আশায় ভাল প্রতিষ্ঠানে চলে যাবেন বা যাওয়ার চেষ্টা করবেন।এই ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী পরিবারের শিক্ষকরা অনেক এগিয়ে থাকবেন।অন্যদিকে অনুন্নত প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষক যেতে চাইবেন না, তাদের কে সেখানে দেওয়া হলেও তিনি মন দিয়ে কাজ ও করবেন না।
কারন সেখানে আর্থিক সুবিধা কম।ফলে এক সময় ভাল শিক্ষক এবং ভাল তদারকির অভাবে ঐ মফস্বলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ পিছিয়ে পড়বে সন্দেহ নাই।তাই বদলি প্রথার আগেই বাড়ি ভাড়া ও আর্থিক সুবিধা সরকারি শিক্ষকদের ন্যায় নিশ্চিত করা জরুরি।
গ• বদলি প্রথা চালু হলে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ তার গুনগত মান হারাতে পারে। সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ কোন বিষয়ে কোন শিক্ষক কত দক্ষ সে অনুযায়ী বিষয় বন্টন হয় এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিক্ল্পনা ঠিক করে।এখন বদলি প্রথা চালু হলে কম দক্ষ শিক্ষক যিনি হয়ত ভাল প্রশিক্ষন পান ই নাই,তিনি সেরা প্রতিষ্ঠানে বদলি হলে ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুনগত মান হুমকির মুখে পড়বে।
তাই বদলি প্রথার আগে শিক্ষকদের গুনগত মান ও প্রশিক্ষন বাধ্যতামুলক এবং জরুরী।
ঘ• বদলি প্রথা চালু হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নিজেদের পছন্দের স্থান বিশেষ করে নিজ এলাকায় কিংবা শহর এলাকায় যেতে চাইবে।কারন সেখানে চাকরির পাশাপাশি স্থায়ীভাবে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কোন পথ তৈরি হবে।এভাবে একসাথে দুই কাজে মনযোগ দিলে এতে শিক্ষার গুনগত মান হুমকির মুখে পড়বে।অন্যদিকে শিক্ষক যেখানে বদলি হতে চায় তাকে সেখানে না দিয়ে দূরে কোথাও দিলে তার মনক্ষুন্নভাব ও তৈরি হবে।
তাই সরকারি শিক্ষকদের ন্যায় বদলির আগে আর্থিক সুবিধা নিশ্চিতের জন্য মাদ্রাসাসহ এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করন জরুরি।
ঙ• বদলি প্রথা চালু হলে মাদ্রাসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।কারন সারাদেশে কোটা প্রথা বন্ধ হলে ও বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ এবং ২৯ নং অনুচ্ছেদ লংঘন করে মাদ্রাসাতে এখনো কোটা প্রথা চালু আছে প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল ,সুপার,লাইব্রেরিয়ান ও সহকারি লাইব্রেরিয়ান নিয়োগে।এর ফলে অযোগ্য সুপার, প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপ্যাল এর অধীনে চাকরি করা যোগ্য , সুযোগ্য জেনারেল শিক্ষকরা স্কুল- কলেজে চলে যাবেন।
কারন মাদ্রাসাতে কোটা প্রথার কারনে যেমনি জেনারেল শিক্ষকরা প্রশাসনিক পদে যেতে পারবেন না, তেমনি ১: ১ প্রথার কারনে পদান্নতি থেকে ও বঞ্চিত হবেন।তাই তারা স্কুল- কলেজে চলে গেলে মাদ্রাসা শিক্ষা তলানিতে পৌছবে।উল্লেখ্য যে বর্তমানে আরবি বিষয়ের তুলনায় মাদ্রাসাতে জেনারল বিষয় ই বেশি। অন্যদিকে দেশে অসংখ্য স্কুল- কলেজ জাতীয়করন হলেও মাদ্রাসা একটি ও জাতীয়করন হয়নি।হওয়ার সম্ভাবনা ও ক্ষীণ।
কারন মাদ্রসার দুটি শিক্ষক সংগঠন জাতীয়করন প্রশ্নে বিভক্ত।জমিয়াতুল মোদার্রেসিন (হুজুরদের সংগঠন) জাতীয়করন প্রশ্নে নীরব অন্যদিকে মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন জাতীয়করন প্রশ্নে সরব এবং আন্দোলনে সক্রিয়।তাই বদলি প্রথার আগে সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করন জরুরি
তাই বলব এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি শিক্ষার এবং শিক্ষকদের উৎকর্ষতা সাধনে কার্যকর ঔষধ হিসেবে কাজ করবে সন্দেহ নাই।তাই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বদলি প্রথা চালু আজ সময়ের যৌক্তিক দাবি।কিন্তু বদলি প্রথা চালু করার আগে উপরিউক্ত সমস্যা সমাধান ও অপরিহার্য।বদলি প্রথা চালুর আগে উপরে উল্লেখিত সমস্যার সমাধান না করলে মহাসংকটে পড়তে পারে শিক্ষার গুনগত মান।
লেখক-শিক্ষাবিদ ও কলামিষ্ট
ফিরোজ আলম, বিভাগীয় প্রধান,আয়েশা (রা:) মহিলা কামিল (অনার্স,এমএ) মাদ্রাসা, সদর, লক্ষীপুর।