বইয়ের দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মেলায় বইয়ের বাড়তি দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি জানিয়েছেন ক্রেতারা। পাঠকদের অভিযোগ মেলায় আসা নতুন বইয়ের মান বৃদ্ধি না হলেও দাম বৃদ্ধি থেমে নেই। নতুন-পুরনো বইয়ে ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে, যা অনেকের সামর্থ্যরে বাইরে।
ফলে মেলায় এসে ও চাহিদামতো বই না কিনে অনেকেই চলে যাচ্ছেন। আর পাঠকের এমন অভিযোগে বিক্রেতারা বলছেন, নিরুপায় হয়ে তারা দাম বাড়িয়েছেন। তাদের যুক্তিÑ সব জিনিসের পাশাপাশি বই ছাপানোর সব উপকরণের দাম বাড়ায় মূল্য বইয়ের দামও বাড়ছে। পাঠকের অভিযোগ স্বীকার করে উৎস প্রকাশন এর স্বত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম বলছেন, প্রতি বছর মেলা শুরুর আগে কাগজের মূল্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়।
সেই সাথে কালি, বাইন্ডিং, প্রিন্টিং, শ্রমিকসহ যাবতীয় খরচ বৃদ্ধি পায়। তার মতে, চলতি বইমেলা শুরুর আগেও কাগজ ভেদে প্রতি রিমে দাম ২২ শ’ থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর সেই সাথে প্রিন্টিং খরচ প্রতি ফর্মায় বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। ফলে তার প্রভাব পড়েছে বইয়ের দামে। এতে চাইলেও দাম কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।
ফলে দাম বৃদ্ধিতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। তবে প্রকাশকদের এমন যুক্তি মানতে নারাজ মেলায় আসা পাঠকরা। আজিমপুর থেকে সন্তানসহ মেলায় আসা রুকসানা জানান, এবার শিশুদের বইয়ের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। চার রঙে ছাপা ছোট্ট একেকটি বইয়ের দাম দেড় শ’ থেকে দুই শ’ টাকা। সেই সাথে পুরনো গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও প্রবন্ধের চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রেতারা সে সুযোগে এগুলোর দাম বাড়িয়েছেন। বইয়ের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সন্তানকে একাধিক বই কিনে দিতে হয়। নিজেও মেলায় এলে তালিকা নিয়ে আসেন।
স্টল ঘুরে পছন্দের বই নিয়ে যান। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে। বইয়ের দাম বৃদ্ধিতে বাজেট সঙ্কুলান না হওয়াতে সব বই কিনতে পারেননি। প্রায় একই রকম অভিযোগ জানালেন সেগুনবাগিচা থেকে আসা আসাদ। তিনি জানান, বই কিনতে অনেক স্টল ঘুরেছেন। তবে নতুন লেখকদের যত বই এসেছে তা মানসম্পন্ন নয়। তবে মানহীন বইয়েও যে দাম তাতে আগামীতে মেলা থেকে বই কেনা সম্ভব হবে না। তিনি মেলায় মৌসুমী প্রকাশকদের নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, এরা মেলার সুযোগ নিয়ে লেখকদের যেমন ঠকায় তেমনি মানহীন বই বেশি দামে বিক্রি করে পাঠকের সাথেও প্রতারণা করছে।
তাই এ বিষয়ে পাঠকদের সচেতনতার পাশাপাশি আয়োজকদেরও তৎপর হওয়ার দাবি জানান তিনি। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকালের বইমেলায় কোলাহল ছিল কম। বিগত কয়েক দিন স্টলে স্টলে মানুষের ভিড় থাকলেও এখন অনেকটা কম। বিক্রেতারা বলছেন, মেলার সময় বাড়িয়ে দেয়ায় ক্রেতাদের চাপ অনেকটা কমে গেছে। কারণ শুরু থেকে ২৮ তারিখ মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকায় প্রথম ১৫ দিন মানুষের চাপ বেশি ছিল। ক্রেতা কম হলেও বেড়াতে আসা দর্শকই ছিল বেশি। মেলায় বাংলা একাডেমি নিয়ে এসেছে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’। বইটির লেখক আসাদ চৌধুরী। পুথিনিলয় থেকে প্রকাশ হয়েছে ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’।
বইটি লিখেছেন ড. মোহাম্মদ আমিন। বিদ্যাপ্রকাশ নিয়ে এসেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘শিক্ষা নিয়ে চিন্তা ও দুশ্চিন্তা’। হরিৎপত্র প্রকাশনী প্রকাশ করেছে হাসান ইমতিয়াজের কাব্যগ্রন্থ ‘ভুলে যাও এইবেলা’। গতকাল অমর একুশে বইমেলার ১৫তম দিনে মেলা চলে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জামিলুর রেজা চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আব্দুল কাইয়ুম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহাম্মদ কায়কোবাদ, মাসুদুল হক ও মুনির হাসান। সভাপতিত্ব করেন আইনুন নিশাত। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।