ফুলসজ্জিত মাইক্রোবাসে চড়ে অবসরে গেলেন সহকারী শিক্ষিকা
যশোরঃ জেলার চৌগাছায় অবসরে যাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. হাসিনা খাতুনকে জমকালো সংবর্ধনা দিয়েছেন তার সহকর্মীরা। ব্যতিক্রমী এ জমকালো সংবর্ধনা স্থানীয়দের মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
হাসিনা খাতুন উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৮৩ সালের ১ ডিসেম্বর যোগদান করেন। দীর্ঘ ৪০ বছর একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশা শেষ করে ১৯ আগস্ট তিনি অবসরে যাচ্ছেন।
অবসরের দিন সরকারি ছুটি হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিদ্যালয়ে তার সহকর্মীরা এক জমকালো সংবর্ধনার আয়োজন করেন।
আয়োজনের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল একটি মাইক্রোবাস ফুল দিয়ে সাজিয়ে তার সামনে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ব্যানার টানিয়ে সহকারী শিক্ষক হাসিনা খাতুনকে সপরিবারে নিজের বাড়ি থেকে স্কুলে নিয়ে আসা হয়। স্কুল প্রাঙ্গণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে আবার ফুল দিয়ে সাজানো ওই মাইক্রোবাসে করে সপরিবারে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এছাড়া বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওই মানপত্র পাঠ, ক্রেস্ট ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। একইভাবে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তাদের শিক্ষককে বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
এমন জমকালো সংবর্ধনা পেয়ে বিদায়ী শিক্ষক হাসিনা খাতুন আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এমন একটি বিদায়ী সংবর্ধনা পাবো কল্পনাও করিনি। আমি আমার সহকর্মীদের এজন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানাই। প্রাথমিকের অন্য শিক্ষকরাও যেন আমার মতো সংবর্ধনা নিয়ে হাসি মুখে চাকরি থেকে অবসরে যেতে পারেন সেই কামনাও করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ইন্তাজ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (এইউইও) জাকির হোসেন, ধুলিয়ানী ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মোমিনুর রহমান ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহেনা পারভীন রুমাসহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহেনা পারভীন বলেন, তিনি ১৯৮৩ সালের ১ ডিসেম্বর এই বিদ্যালয়ে যোগদান করে ৪০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়ে এসেছেন। আমরা শিক্ষকরা বসে আমাদের সহকর্মীকে কত ভালোভাবে বিদায় দিতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা করে এভাবে একটা জমকালো অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিই।
তিনি বলেন, হাসিনা খাতুনের গ্রামের বাড়ির পাশের ঝিকরগাছা উপজেলার গুলবাগপুর গ্রামে। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। তার এক ছেলে ঢাকায় একটি মসজিদের খতিব এবং অন্যজন ঢাকাতে ব্যবসা করেন। দুই মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন। তার একমেয়ের জামাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অন্যমেয়ের জামাই ব্যাংক কর্মকর্তা। স্বামী আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। একজন শিক্ষক দীর্ঘদিন পেশা জীবন শেষে অবসরে যাওয়ার সময় সম্মানিত হয়ে বিদায় নেয়া তার প্রাপ্য। অন্য বিদ্যালয়গুলির শিক্ষকদেরও এধরনের অনুষ্ঠান করার বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়