“প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে, সামিল হই সকলে”
গাজী মোহাম্মদ এনামুল হক।।
সিনিয়র প্রভাষক, সরকারি ফুলতলা মহিলা কলেজ, ফুলতলা, খুলনা
পরিবেশবাদী ও লেখক
Plastic is not a complex compound but rather a polymer made up of CH2=CHCl. Polymer is a large molecule or macromolecule, composed of many repeated (প্লাস্টিক জটিল যৌগ নয় বরং এটি CH2=CHCl দ্বারা গঠিত একটি পলিমার। পলিমার হল একটি বৃহৎ অণু বা ম্যাক্রোমোলিকিউল, যা অনেকবার গঠিত হতে পারে। ) এটা এমন বস্তু যা কোন সিন্থেটিক বা আধা-সিন্থেটিক জৈব যৌগ দ্বারা তৈরি। প্লাস্টিকের গলনাংক ৮৫ ডিগ্রি হতে ২২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্তও হতে পারে। কার্বন পরমাণুগুলো চেইনে সংযুক্ত থাকে এবং দীর্ঘ-চেইন অণুতে উৎপাদিত হয় ।
১৮৮৬ সালে বিখ্যাত জার্মান রসায়নবিদ ক্রিশ্চিয়ান শোনবেইন প্লাস্টিক আবিষ্কার করেছিলেন। প্লাস্টিক শব্দটি এসেছে 'প্লাস্টিকাস' (ল্যাটিন এর জন্য 'কাপ্যাবল অফ মোল্ডিং') এবং 'প্লাস্টিকোস' (গ্রীক শব্দ 'ছাঁচের জন্য উপযুক্ত') থেকে। যখন আমরা প্লাস্টিক বলি, তখন উচ্চ আণবিক ওজনের জৈব পলিমার (সিন্থেটিক বা প্রাকৃতিক) উল্লেখ করি যা অন্যান্য পদার্থের সাথে মিশ্রিত হয়। ওজনে হাল্কা এই পদার্থ পানি এবং বায়ু নিরোধক। ব্যাগ বা প্যাকেট হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার আজকাল প্রায় সকলেই করে থাকেন। এমনকি বাজার করার সময় জিনিসপত্র, খাবার, পানি প্রভৃতি বহনে প্লাস্টিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছে।
প্লাস্টিক দুই প্রকারে বিভক্ত: যথা- থার্মোপ্লাস্টিক এবং থার্মোসেটিং।
যা গরম করার পরে সহজেই বিকৃত হতে পারে এবং সহজেই বাঁকানো যায় সেটি থার্মোপ্লাস্টিক। লিনিয়ার পলিমার, রৈখিক এবং ক্রস-লিঙ্কড পলিমারের সংমিশ্রণ থার্মোপ্লাস্টিকের অধীনে আসে। যেমন- পিভিসি, নাইলন, পলিথিন ইত্যাদি। অন্যদিকে, যেগুলোকে ছাঁচে তৈরি করা হয় কিন্তু গরম করে নরম করা যায় না সেগুলো হলো থার্মোসেটিং। ভারীভাবে ক্রস-লিঙ্কযুক্ত পলিমারগুলো থার্মোসেটিং প্লাস্টিকের অংশ । যেমন- বেকেলাইট, মেলামাইন ইত্যাদি। বৈদ্যুতিক সুইচ তৈরিতে ব্যাকেলাইট ব্যবহার করা হয় যেখানে মেঝে টাইলসের জন্য মেলামাইন ব্যবহার করা হয়।
প্লাস্টিক দূষণ বলতে পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্য, বিশেষ করে মহাসাগর, নদী, বন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক আবাসস্থলে জমা হওয়াকে বোঝায়। এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত সমস্যা যা বাস্তুতন্ত্র, বন্যপ্রাণী এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। প্লাস্টিক পণ্যগুলির অত্যধিক এবং অনুপযুক্ত নিষ্পত্তির কারণে প্লাস্টিক দূষণ ঘটে, যার ফলে শত শত বছর ধরে পরিবেশে তাদের স্থায়িত্ব থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রে প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ টনেরও অধিক পরিমাণ প্লাস্টিক দূষণ হয়। জৈব পরিবেশে কার্যকারিতার প্রেক্ষিতে দূষিত পদার্থ দুইধরনের।
(ক) জৈব পঁচনশীল দূষিত পদার্থ যেমন, জীবজন্তুর দেহ বা দেহাবশেষ। এবং
(খ) জৈব পঁচনবিমুখ দূষিত পদার্থ যেমন, পলিথিন প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের পর কঠিন বর্জ্য হিসেবে পরিত্যক্ত হয়, কিন্তু জৈব পদ্ধতিতে পঁচনশীল নয় বলে সহজে পঁচে মাটির সঙ্গে মিশে না। ফলে তা মাটি, পানি ও বায়ুকে দূষিত করে সমস্যার সৃষ্টি করে পরিবেশ দূষণ করে।
্
প্লাস্টিকের বৈশিষ্ট্যঃ এগুলো অ-বায়োডিগ্রেডেবল এবং অণুজীবের ক্রিয়া দ্বারা পঁচে না, শক্তিশালী, নমনীয়, তাপ এবং বিদ্যুতের দুর্বল পরিবাহী। ইহা ক্ষয় প্রতিরোধ করে এবং অনেক রাসায়নিকের প্রতিরোধী।
আমাদের মাটি, পানি, বায়ু প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক দ্বারা দূষিত হচ্ছে। এছাড়া প্লাস্টিক স্টিরিন নামক ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত করে, যা মানবদেহে তৈরি করতে পারে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি। মোটকথা, প্লাস্টিক পদার্থটি কোনোভাবেই পরিবেশ ও মানবজীবনের জন্য উপকারী নয়। বরং এর ব্যবহারে পরিবেশ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাতে মাশুল দিতে হবে আমাদেরই।
প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক প্রভাবঃ বর্জ্যগুলো শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে, শহরের নালা-নর্দমা ভরিয়ে তুলছে এবং গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগমপূর্ণ স্থানকেও অপরিষ্কার করে তুলছে। সেগুলো পোড়ালে বায়ু দূষিত হচ্ছে, শহরে তা পয়ঃপ্রণালী, পুকুর, জমি, জলাভূমিকে বিনষ্ট করছে- যা পরিবেশগত দিক থেকে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা তৈরি করছে। খোলা জায়গায় প্লাস্টিকের উপস্থিতি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে। কারণ, এটি পোকামাকড় এবং মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করে যা ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো রোগ বিস্তারের ভয়ানক আশংকা সৃষ্টি করে।
প্লাস্টিকগুলো নষ্ট না হয়ে বহু বছর ধরে মাটিতে অক্ষত থাকে, যা মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং মাটির গুণগত মানকে হ্রাস করে। এই পদার্থ নর্দমা এবং নিকাশী সিস্টেমে প্রবেশ করার পরে পাইপে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে ফলে ড্রেনগুলো অবরুদ্ধ হচ্ছে। প্লাস্টিকের আইটেমগুলো নদী এবং অন্যান্য জলাশয়ের দিকে তাদের পথ সন্ধান করে। কোন প্রাণী যেমন- মাছ, সামুদ্রিক পাখি এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রজাতি এগুলো খেয়ে ফেললে তাদের পেট এবং অন্ত্র সম্পর্কিত রোগ সৃষ্টি করে মৃত্যুর কারন হতে পারে। প্লাস্টিক উৎপাদন শিল্পের বর্জ্যগুলো সরাসরি জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়, ফলে পানির বিশুদ্ধতা নষ্ট হচ্ছে । এ পদার্থটি জৈব পচনবিমুখ দূষিত পদার্থ।
বিধায় গলে-পচে যায় না, কিম্বা একে পুড়িয়ে ফেললেও ক্ষতিকারক গ্যাস উৎপন্ন হয়। মাটির নীচে গিয়ে মাটিকে দূষিত করে, সমুদ্রে, নদী-নালায় গিয়ে পানিকে দূষিত করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি তথা বায়ু দূষণ করে। অথচ নমনীয়তা, দৃঢ়তা প্রভৃতি কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে এবং তার ফলে দূষণ সৃষ্টি করছে। বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশে ভয়ঙ্কর সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তা সমুদ্রকে গ্রাস করছে। এমনকি প্লাস্টিকের উৎপাদন ক্রমশ এত বাড়ছে যে সেই সমস্যা আরও গভীর আকার ধারণ করেছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ফেলে দেবার পর বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ নানাবিধ শারিরীক সমস্যা সৃষ্টি করছে।বিশেষ করে প্লাস্টিক থেকে যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সৃষ্টি হয় তা হল ‘বিসফেনল এ’ (Bis-phenol A)-যা মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থাকে আমন্ত্রন জানায়।
যেমন- থায়রয়েডের সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব, বিভিন্ন স্ত্রীরোগ, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, স্তন ক্যানসার প্রভৃতি। আকারের উপর ভিত্তি করে, মাইক্রো- মেসো এবং ম্যাক্রোবর্জ্য এই তিনভাগে প্লাস্টিক দূষণকে শ্রেণীকরণ করা হয়।নিয়মিত প্লাস্টিক পদার্থের ব্যবহার প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন হয় না৷ এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যের আকার নেয়৷ মানুষের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ ৷ এটা এমন রাসায়নিক পদার্থ যা পচতে বা কারখানায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রচুর সময় লাগে ৷
তাই একে "অপচ্য পদার্থ" হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। প্লাস্টিক, বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে৷ সাধারনত উদ্ভিদকূল, জলজ প্রাণী, দ্বীপ অঞ্চলের প্রাণীকূল প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে৷ প্লাস্টিক বর্জ্য ঐসকল প্রাণীর বাসস্থান, খাদ্য সংগ্রহের স্থান ও উদ্ভিদের খাদ্য গ্রহণের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র উদ্ভিদ বা জলজ প্রাণী নয়, মানুষ প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য প্লাস্টিক দূষণ পরোক্ষভাবে দায়ী৷ শুধুমাত্র আমেরিকাতে প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হয়৷ এগুলোর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ পুনঃচক্রায়ন হয়ে থাকে৷ অন্ততঃ ৩.৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য আকারে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়৷ বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ৷
বাংলাদেশেও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এক গবেষনায় দেখা গেছে, আমেরিকানরা তাদের আবর্জনার মাত্র ৩৫% পুনরায় ব্যবহার করতে পারে। আমাদের ব্যবহার্য যে দ্রব্যটি পরিবেশ দূষণের পেছনে অন্যতম বড় ভূমিকা রাখছে তা হলো প্লাস্টিক। আমরা প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক ব্যবহার করছি এবং পরিবেশকে দূষিত করছি। আমাদের দৈনন্দিন কাজে প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বেশিরভাগ মানুষের কাছেই প্লাস্টিক দ্রব্য ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর মুখে দেয়া চুষনি, দুধের বোতল থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন খাবার প্লেট, জগ, গ্লাস, থালা, বাটিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিসই তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়ে। তাই, পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে সবাইকে তৎপর হতে হবে এবং ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য যত্রতত্র না ফেলে এগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। আমরা যত দ্রুত প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার থেকে নিজেদের বিরত রাখব, তত দ্রুত প্লাস্টিক-দূষিত পরিবেশ থেকে নিজেদের মুক্ত হবো।
প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে যেমনঃ নদী,পুকুর,খাল-বিলে ইচ্ছামতো ময়লা ফেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। শিশুদের খেলার জন্য কোন কুপন বা কার্ড ঘরে তৈরি করে উপহার দেওয়া যেতে পারে। বেলুনের পরিবর্তে কাগজের তৈরী পম্পম উপহার এমনকি এটা দিয়ে ঘর সাজালে তা যেমন ঘরের সৌন্দর্য্য রক্ষা করবে তেমনি পরিবেশ বান্ধবও হবে।
আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে ঝুড়ি ব্যবহার করতে হবে। স্কুলগুলোতে পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন ক্লাব খোলা যেতে পারে। যেখানে পরিবেশ রক্ষা সপ্তাহ , মিটিং এবং মেলার মতো কর্মসূচি থাকবে। এতে শিশুদের মাঝে সচেতনতা বাড়বে, তারা পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্বশীল এবং যত্নবান হবে। প্রতিবাড়ি থেকে প্লাস্টিক দ্রব্য অপসারণ, প্লাস্টিকের বদলে পরিবেশ বান্ধব অন্যকিছু ব্যবহারে পরামর্শ প্রদান এবং এর ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরে জনসচেতনতা তৈরি করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে ,আমেরিকানরা দিনে ৫০কোটি প্লাস্টিক স্ট্র ব্যবহার করেন।
এক্ষেত্রে কোনো ধাতুর তৈরী বা কাগজের স্ট্র ব্যবহার করা যেতে পারে। প্লাস্টিক যেহেতু বর্তমানে অতি প্রয়োজনীয় উপাদান তাই, এই উপাদানকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বর্জ্য প্লাস্টিককে ভেঙে ফেলে তার দ্বারা অনেক কিছু তৈরি করা যায়। তবে এই পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়া অন্যান্য কঠিন বর্জ্যের তুলনায় অনেক বেশি জটিল এবং খরচ সাপেক্ষ। ব্যবহারকারীদের সচেতনতা এবং ব্যবহারের পর তা নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে পুনর্নবীকরণের প্রক্রিয়াতে সাহায্য করা একান্ত কর্তব্য।
প্লাস্টিক দূষণরোধে আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে যেমন- ৩০ মাইক্রোনের নীচে প্রস্তুত প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ও এক্ষেত্রে অমান্যকারীদের কঠিন শাস্তি প্রদান করা।
যেখানে সেখানে প্লাস্টিক ফেলে না দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা, যাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে গিয়ে তাকে পুনর্নবীকরণ করতে পারে। কোন প্লাস্টিক একবার ব্যবহার করার পর আবার সেটিকে ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া যায় কি না তা দেখতে হবে। দোকানে বা অন্যত্র ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ক্রেতাকে বলতে হবে আমি প্লাস্টিক চাই না। বিক্রেতাকেও প্লাস্টিকের বদলে কাগজের ঠোঙা, চটের প্রস্তুত সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। সর্বোপরি প্লাস্টিকের ব্যবহার ও তার ক্ষতিকারক দিক সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করা খুব জরুরি। একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক যেমন প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্ট্র, বোতল ব্যবহার না করে কাপড়ের ব্যাগ, স্টেইনলেস স্টিলের বোতল এবং পরিবেশ বান্ধব প্যাকেজিংয়ের মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস বেছে নিন।
প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার করুন অন্যদেরও একইভাবে উৎসাহিত করুন। প্লাস্টিক দূষণ হ্রাস করার লক্ষ্যে শক্তিশালী আইন করে প্লাস্টিক ব্যাগে নিষেধাজ্ঞা, প্লাস্টিকের বোতল জমা স্কিম, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা। শিক্ষামূলক প্রচারণা, সামাজিক ও মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ গ্রহণ করে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করুন ।
সৈকত পরিচ্ছন্নতা, নদী পরিচ্ছন্নতা বা সম্প্রদায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য স্বেচ্ছাসেবী একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে বায়োডিগ্রেডেবল, কম্পোস্টেবল বা পুনঃব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহিত করুন।ব্যবসা এবং শিল্পকে প্লাস্টিকমুক্ত এবং পরিবেশ বান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। খাবার ও অন্যান্য ব্যবহার্য তৈজসপত্রের জন্য নিরাপদ প্লাস্টিক ব্যবহার করা। পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল ও অন্যান্য দ্রব্য যেখানে সেখানে না ফেলা। প্লাস্টিকের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা।
প্লাস্টিকের পরিবর্তে পরিবেশের সাথে সহজে মিশে যায় এমন দ্রব্য যেমন, কাঁচ, অ্যালুমিনিয়াম, কাগজ, পাট, বাঁশ ও কাপড় দিয়ে প্যাকেজিং তৈরি করা। পচনশীল ময়লা ফেলার আগে প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী আলাদা করে ফেলা। রিসাইকেল করার কোনও উপায় না থাকলে তা পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলা।একমাত্র সচেতনতাই পারে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম ও পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে। তাই প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হউন, সুস্থ থাকুন ও পরিবেশ বাঁচান। প্লাস্টিকে বিদ্যমান বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ভূগর্ভস্হ পানি ও ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে মিশে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। গবেষণায় জানা যায় যে, জীবাণুবিয়োজ্য প্লাস্টিক ভাঙনের মাধ্যমে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে উনিশ শতকে পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের প্রচলন মানবজীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে।
বর্তমানে আমাদের নিত্যব্যবহার্য সরঞ্জামের বেশির ভাগই প্লাস্টিক। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, গৃহস্হালীর আসবাবপত্র, খাদ্যদ্রব্য বিপণন থেকে শুরু করে সর্বত্রই প্লাস্টিকের উপস্হিতি লক্ষণীয়। দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বেশির ভাগই মাত্র একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। ফেলে দেওয়া এসব প্লাস্টিকের সর্বশেষ গন্তব্য হয় নর্দমা, পুকুর, ড্রেন, নদী কিংবা সমুদ্র। এর ফলে পানি দূষণ ও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি সামুদ্রিক প্রাণীর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। নিঃসন্দেহে এটি জলজ প্রাণী ও সামুদ্রিক বাস্ত্ততন্ত্রের জন্য এক অশনিসংকেত।
এছাড়াও সামুদ্রিক পাখি ও অন্যান্য প্রাণীরা খাদ্য হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য গ্রহণ করার ফলে প্লাস্টিকে বিদ্যমান রাসায়নিক উপাদান তাদের দেহের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বিনষ্ট করে অবশেষে মৃত্যু ঘটায়। এছাড়াও প্লাস্টিক পদার্থে ব্যবহৃত রাসায়নিক রঞ্জক কারসিনোজেন হিসেবে মানবদেহের এন্ডোক্রাইনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের নিত্যব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী সূর্যালোকের সংস্পর্শে এসে বিষাক্ত রাসায়নিক উপকরণ তৈরি করে, যা ব্রেস্ট ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি, গর্ভধারণে সমস্যা, লিভার ক্যানসারসহ নানা ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি করে। সারা বিশ্বে ব্যবহূত প্লাস্টিকের প্রায় ৫০ শতাংশই উৎপন্ন হয় এশিয়া মহাদেশে।
পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারিভাবে ভোক্তা ও উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃত করতে হবে, যে কেউ যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেললে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্হা গ্রহণ করতে হবে, প্লাস্টিক দ্রব্যের ওপর অত্যধিক শুল্ক আরোপ করে পাটজাত দ্রব্যের সুলভ মূল্য নিশ্চিত করতে হবে, প্লাস্টিক পুনঃপ্রস্ত্ততির ব্যবস্হা গ্রহণ, প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্পরূপে বায়োডিগ্রেডেবল পদার্থ ব্যবহারে উৎসাহিতকরণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্হাসমূহকে প্লাস্টিক দূষণের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
সর্বোপরি এই পৃথিবীকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য রাখতে হলে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ২০২৩ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “Solutions to Plastic Pollution” অর্থাৎ প্লাস্টিক দূষণের সমাধান। প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে সামিল হই সকলে , সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ।
Beat plastic pollution, Beat plastic pollution, Beat plastic pollution, আসুন সকলে মিলে শ্লোগান তুলি- গাছ লাগিয়ে যত্ন করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি। প্লাস্টিক দূষণকে রোধ করি।
লেখক-
সিনিয়র প্রভাষক, সরকারি ফুলতলা মহিলা কলেজ, ফুলতলা, খুলনা
পরিবেশবাদী ও লেখক