প্রধান শিক্ষক ‘জামায়াত’, তাই শোক দিবস আয়োজনে অব্যবস্থাপনা
জামালপুরঃ জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবস পালনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকরা বলছেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জামায়াতের লোক। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে শোক দিবস পালনে কোনো ব্যানার রাখেননি এবং শিক্ষকদের বসার আয়োজনও করেননি। তারা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেন।
তবে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার খেয়াল ছিল না। ব্যানার তৈরি করতে না পাড়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
জানা যায়, মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে ওই বিদ্যালয়ে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ব্যানার না থাকায় এ ঘটনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠান বর্জন করে শুধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও শিক্ষার্থীদের মাঝে খাদ্য বিতরণের মধ্য দিয়ে শোক দিবসের কার্যক্রম শেষ হয়।
জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। জেলা প্রশাসন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ৮০ শিক্ষার্থী ও কয়েকজন শিক্ষককে শিল্পকলায় পাঠানো হয়। আর বাকি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরে শোক দিবসের অনুষ্ঠান করার কথা। বাকি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য অনুষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবসের কোনো ব্যানার ও শিক্ষকদের বসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জাতীয় শোক দিবসের কোনো ব্যানার নেই। বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় অনুষ্ঠান চলছে। সেই অনুষ্ঠানেও কোনো ব্যানার নেই। পরে শিক্ষকরা উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওই অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে নিয়ে আসেন। তারা প্রধান ফটক বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। পরে শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণ করে অনুষ্ঠান শেষ করে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক রাশেদ মাহমুদ জানান, ‘বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় শোক দিবসের কোনো ব্যানার ও শিক্ষকদের বসার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এ অবস্থায় ব্যানার ছাড়াই অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। এটি প্রধান শিক্ষককের ইচ্ছাকৃত ঘটনা। এতে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করছি।
এ প্রসঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সুরাইয়া সুলতানা জানান, ‘তিনি জামায়াতের লোক। তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে জামায়াত সংশ্লিষ্ট পত্রিকা রাখেন এবং তিনি প্রতি মাসে জামায়াতকে চাঁদাও দেন। গতকাল (সোমবার) স্বাধীনতাবিরোধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে তিনি শোকে কাতর। এ জন্য জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তার মন নেই ব্যানারও বানাননি’।
এ বিষয়ে জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান মো.আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমার খেয়াল ছিল না। গতকাল (সোমবার) বিকেলে ডিসি অফিস থেকে ফোন দিয়ে জেলা শিল্পকলায় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ৮০ শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে পাঠানোর কথা বলে। পরে আমি শ্রেণি শিক্ষকদের রোল নম্বর দেখে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। ওই অনুষ্ঠানের কাজ করতে গিয়ে ব্যানার তৈরির কথা খেয়াল নাই।
এ জন্য বারবার দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। জামায়াতের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। কারণ দর্শানোর জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। সঠিক জবাব দিতে না পাড়লে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়