প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
সাতক্ষীরা: সরকার কর্তৃক প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রদত্ত উপবৃত্তির টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ২৫নং পারকুখরালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কনিকা ঘোষের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ১২ জুন প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পরকুখরালী গ্রামের হবিবর রহমানের কন্যামেয়ে মোছা. সোনিয়া আক্তার।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন তার ছেলে সিয়াম হোসেন ও মেয়ে সিনথিয়া বিদ্যালয়টির ৪র্থ ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা করোনা মহামারীর শেষ পর্যায়ে একবার উপবৃত্তির টাকা পেলেও গত ২ বছর আর পান না। গত ১২ জুন বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করার দিনই কাকতালীয়ভাবে তার সন্তানদের উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পেয়েছেন তিনি।
শুধু উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ নয়, স্কুল ড্রেস পরে না আসায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গলাধাক্কা দিয়ে স্কুল থেকেও বের করে দিতে দ্বিধা করেন না প্রধান শিক্ষক কনিকা ঘোষ। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হলো শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের টয়লেট ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে বাচ্চাদের বাসায় পাঠিয়ে দেন প্রধান শিক্ষক কনিকা ঘোষ। বলেন স্কুলের টয়লেট স্যারদের জন্য তোমরা ব্যবহার করলে নোংরা হবে। পরিষ্কার করবে কে? টয়লেটে যাওয়ার দরকার হলে যার যার বাড়ি গিয়ে টয়লেট করে আসবে। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিল বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ১০ টাকা করে উত্তোলনের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে পরকুখরালী গিয়ে জানা যায়, শুধু সিয়াম ও সিনথিয়া নয় বিদ্যালয়টির অনেক শিক্ষার্থী একবার দুইবার উপবৃত্তির টাকা পেলেও গত ২ বছর পাচ্ছে না। এ সময় পারকুখরালী গ্রামের মোশারফ, শাহিনুর, খোদেজা বেগম, আবুল হোসেন, গৌর সরকার, জাহিদা বেগম, মো. আরশাদসহ একাধিক অভিভাবক সাংবাদিকদের জানান, আমাদের বাচ্চারা পারকুখরালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যায়ন করে। তারা করোনা মহামারীর সময়ে উপবৃত্তির টাকা পেলেও গত ২ বছর পাচ্ছে না। অথচ অন্যান্য বাচ্চারা ঠিকই টাকা পাচ্ছে। প্রধান শিক্ষক কনিকা ঘোষ কৌশলে এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা অনেকে গরীব মানুষ দিন আনি দিন খাই। সরকার শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস কেনার জন্য ১ হাজার করে টাকা দিলেও আমরা তা পাইনি। ফলে সব অভিভাবক সন্তানদের স্কুল ড্রেস তৈরি করে দিতে পারেনি। ফলে শিক্ষার্থীরা স্কুল ড্রেস না পরে স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক কনিকা ঘোষ তাদের গলাধাক্কা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেন। আর টয়লেটে যাওয়ার দরকার হলে ছাত্র ছাত্রীদের বাসায় পাঠিয়ে দেন তিনি। আমরা বিষয়টি স্কুলে যেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি ও সহকারী শিক্ষক মামুন আমাদের ভৎসনা করেন। আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে হাকিয়ে দেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগকারী মোছা. সোনিয়া খাতুন জানান, আমার ২ জন বাচ্চা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। তারা করোনাকালীন সময়েও উপবৃত্তির টাকা পেয়েছে। গত ২ বছর প্রধান শিক্ষক কারসাজি করায় আমরা আর টাকা পাচ্ছি না। ফলে আমার সন্তানদের লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়ায় আমি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেই। অভিযোগ দেয়ার পরপরই আমার মোবাইলে বাচ্চাদের উপবৃত্তির টাকা আসে। পরে আমি স্কুলে গেলে মামুন স্যার (সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন) আমাকে গালিগালাজ করে বলেন, ওসব দরখাস্তে আমাদের কোন কিছু হবে না। ওরকম দরখাস্ত কত দেখলাম।
সাতক্ষীরা পৌর ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান বলেন, আমি পারকুখরালী গ্রামের একজন নাগরিক। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক কনিকা ঘোষ একজন স্বেচ্ছাচারী। তিনি এলাকার গন্যমান্য লোক কাউকে তোয়াক্কা করেন না। এই স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা একবার দুইবার পাওয়ার পরে আর পাচ্ছে না। এখানে প্রধান শিক্ষকের নিশ্চয় কোন হাত আছে। তিনি শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে গলা ধরে বের করে দেন স্কুল ড্রেস না পরে গেলে। এছাড়া বাচ্চাদের স্কুলের টয়লেট ব্যবহার করতে না দিয়ে বাড়িতে টয়লেট করতে পাঠান। বিদ্যুৎ বিলের নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ১০ টাকা হিসাবে তিনি টাকা নেন কিন্তু ঠিকমত ফ্যান চালাতে দেন না। ফলে তিব্র গরমে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পায়। এছাড়া গত ২০১৬ সালের পুরাতন ডায়েরী চলতি বছরে ১০০ টাকা করে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে বিক্রি করেছেন তিনি। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে স্কুল থেকে হাকিয়ে দেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক কনিকা ঘোষ বলেন, উপবৃত্তির টাকা এখন অনলাইনে দেয়া হয়। অনলাইন জটিলতা থাকায় অনেকে সময়মত টাকা পায়নি। এছাড়া যৌথ বাচ্চারা কোন স্কুলে সময়মত টাকা পায়নি। এ বিষয়ে আমাদের কোন হাত নেই। স্কুল ড্রেস না পরে আসলে বাচ্চাদের গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলের একটি নিয়ম শৃঙ্খলা আছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়