প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্যাকেজ এবং নন-এমপিও শিক্ষক
মো.সাজ্জাদ হোসেন।।
সারা বিশ্বে ভয়ংকর আতংকের নাম কোভিড-১৯ । কোভিড-১৯ এর থাবায় সারা বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। চীন ,ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মহাশক্তিধর রাষ্ট্র ও আজ করোনা ভাইরাসের মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
চিকিৎসা ব্যবস্থা ও খাদ্য দ্রব্য সহ সারাবিশ্ব আজ গভীর সংকটে। বাংলাদেশকেও গভীর সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের দূর্যোগকালীন সময়ে ৭২হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ৫ টি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ও ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পের মালিকদের জন্য এবং শিল্প কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারিদের বেতন ভাতা নিশ্চিত করণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ।
নিম্ন আয়ের শ্রমিক ভাই-বোনদের কি অসহায় জীবন? তাদের চাকরির কোন বিধি-বিধান নেই। তাদেরকে মালিক পক্ষের খেয়াল খুঁশিমত চলতে হয়। সরকারি নিয়ম কানুনের কোন কিছুই মালিক পক্ষ মেনে চলে না। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ৫ এপিল কাজে যোগদানের নির্দেশনায় সকল শ্রমিক কর্মচারিকে চাকুরি বাঁচানোর তাগিদে কাজে যোগদানের জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে ঢাকায় আসতে হয়েছে। পায়ে হেঁটে আবার ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন ব্যবহার করে দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়ায় তাদের কর্মস্থলে আসতে হয়েছে। আসার পর শুরু হলো নতুন নাটক।
মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ না করে তাদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪ তারিখ রাতেই খালি হাতে তাদেরকে আবার বাড়ি ফিরতে হয়েছে। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রমিক ভাইবোনদের কষ্টের চিত্র অসংখ্য মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই তাদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছিলেন। যা মালিক পক্ষ ২% সুদে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশেধের জন্য ব্যবহার করতে পারবে।
ডিজিটাল যুগে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেও শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা যেত। তারা ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গে স্বস্তিতে জীবন কাটাতে পারত।
কারখানা শ্রমিক,মটর শ্রমিক ও নির্মাণ শ্রমিক,রিক্সা শ্রমিকসহ সকল মৌসুমি শ্রমিক তথা যারা দিন আনে দিন খায় তাদের অবস্থা আজ শোচনীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি তহবিল থেকে প্রশাসন ইতিমধ্যেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সমাজের দানশীল অনেক ব্যক্তিবর্গও সরকারি নির্দেশ মোতাবেক মানবিক মূল্যবোধ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তবুও সকল নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারি ও বে-সরকারি সহযোগিতার আওতায় এসেছে এটা বলা যায়না।
চক্ষু লজ্জায় ও সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে অনেক মানুষ বে-সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে সহযোগিতা প্রদানকারি কোন মানুষের সহযোগিতা নিতে চাইনা। তাদের জীবনযাত্রা কতটা শোচনীয় পর্যায়ে।
শ্রমিক ভাইবোনের মতই অসহায় একশ্রেণির মানুষ হলো নন.এমপিও শিক্ষক কর্মচারি। চাকুরি আছে বেতন নাই। বছরের পর বছর বিনা বেতনে দেশ ও জাতির অগ্রগতির জন্য দিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা সেবা। জাতীয় দূর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের অংশীদার হয়ে কাজ করতে হয়। সরকারের সকল কর্মকান্ডে রাখতে হয় গুরুত্বপূর্ণ আবদান।
দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন গুলো তুলে ধরতে হয় নতুন প্রজন্মের সামনে। স্বপ্ন জাগাতে হয় নতুন প্রজন্মের মনে। সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে কিভাবে দেশপ্রেমিক হওয়া যায়। কিভাবে দেশ ও দশের সেবা করতে হয়। অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে কিভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকতে হয়।
যারা জাতির ভবিষ্যৎ তৈরির কাজে সদা ব্যস্ত থাকে তাদের ভাগ্যের কোন উন্নতি নেই। দেশের ক্রান্তিকালেও তাদের ভাগ্যে জোটেনা রাষ্ট্রীয় কোন সাহায্য সহযোগিতা। তাদের পরিবার পরিজনের জন্য বরাদ্ধ থাকেনা কোন রাষ্ট্রীয় অনুদান। দিন যায়,সময় বদলায় কিন্তু তাদের ভাগ্যের কখনও বদল হয়না। পরিবার পরিজন নিয়ে সেই কষ্টের জীবন কষ্টের রয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্যাকেজে নেই কোন নন.এমপিও শিক্ষক কর্মচারির জন্য বিশেষ বরাদ্ধ। অসহায় শিক্ষক কর্মচারি কিভাবে বাঁচবে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখপানে যারা চেয়ে আছে আবার ও তারা হতাশ হলো। মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,যার মমতায় ১০ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গা তিনবেলা খেঁয়ে পরে বেঁচে আছে।
অথচ অল্প কিছু সংখ্যক নন.এমপিও শিক্ষক কর্মচারির কি দূর্দিন যাচ্ছে এই সময়। নিজ দেশে শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেও তারা তিনবেলা খাবার পাচ্ছে না। অসুস্থ্য বাবা মায়ের চিকিৎসা করাতে পারে না। স্ত্রী সন্তানদের কোন চাহিদায় পূরণ করতে পারে না। অবর্ণনীয়,অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছে নন.এমপিও শিক্ষক সমাজ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বঙ্গকন্যা,মানবতার মা নন.এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারি সবাই আপনার পানেই চেয়ে আছে। শুধুমাত্র আপনিই পারেন নন.এমপিও শিক্ষকদের কান্ডারি হয়ে এই মহাদূর্যোগ থেকে রক্ষা করতে।
লেখক- প্রভাষক,হিসাব বিজ্ঞান
লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ
নবীনগর,ব্রাহ্মণবাড়িয়া।