প্রথম টিকা পেল ১২০ স্কুল শিক্ষার্থী
নিউজ ডেস্ক।।
পরীক্ষামূলকভাবে দেশে শুরু হলো স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম। গতকাল বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে জেলার চারটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১২০ শিক্ষার্থীকে মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের তৈরি টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। বিশেষ এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা
সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা, কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ, মানিকগঞ্জের ডিসি, পুলিশ সুপার, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনসহ জেলার অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসছে। তারা যাতে করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদে এবং সুরক্ষিত থাকে সে জন্য আজ পরীক্ষামূলকভাবে আমরা স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগ শুরু করলাম।
প্রথম পর্যায়ে ৩০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘সারাদেশে এক কোটির বেশি ছেলেমেয়েকে আমরা টিকা দেব। এটা পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। আমাদের হাতে এখন ৬০ লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা আছে। সারাদেশে ২১টি জায়গায় চালানো হবে টিকাদান কার্যক্রম। ঢাকায় একটি বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও টিকাদান হবে।’
জানা গেছে, এদিন মানিকগঞ্জের চারটি স্কুলে নবম ও দশম শ্রেণির ১২০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জেলা শহরের সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ৫০ জন, সরকারি এসকে বালিকা বিদ্যালয়ের ৫০ জন, গড়পাড়া জাহিদ মালেক উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ জন এবং আটিগ্রাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে।
মানিকগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. লুৎফর রহমান জানান, এখন এ কিশোর-কিশোরীদের ১০ থেকে ১৪ দিন যার যার বাসায় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মো. জাকির হোসেন জানান, টিকা নেওয়ার পর কোনো শিশু যদি অসুস্থ বোধ করে কিংবা কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, তার জন্য মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া টিকা নেওয়া শিশুরা বাড়িতে গিয়েও কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ে কিনা সেদিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত টিকা গ্রহণকারী কোনো শিশুর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।
এদিন কার্যক্রমের শুরুতেই প্রথম টিকা গ্রহণ করে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্র ১৬ বছর বয়সী মোবাশ্বির রহমান রাফি। মেয়েদের মধ্যে প্রথম টিকা নেয় গড়পাড়া জাহিদ মালেক উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া আক্তার তোয়া। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাদের টিকা দেওয়া হয়। টিকা গ্রহণের পর প্রতিক্রিয়ায় তোয়া বলে, স্কুল খোলার পর থেকে ভয়ে ভয়ে ক্লাস করেছি। এখন টিকা নিয়ে নিশ্চিন্তে ক্লাস করতে পারব। করোনার ভয় মন থেকে কেটে গেছে। শিশুদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
ফাইজারের টিকা সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ টিকাটি আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোসহ অন্যান্য অনেক দেশে দেওয়া হচ্ছে। টিকাটি অনেক বেশি নিরাপদ। আমরা চাই, আমাদের শিশুরাও নিরাপদে থাকুক। এ জন্য ফাইজারের টিকাটি আমাদের শিশুদের দিয়ে ট্রায়াল করা হলো। অল্পদিনের মধ্যেই সারা দেশে ফাইজারের এ টিকা আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যখন বহু দেশ টিকা না পেয়ে হাহাকার করছে, সে সময় বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে অন্তত ৬ কোটি মানুষকে ইতোমধ্যেই ভ্যাক্সিন প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিজ, সেরাম ইনস্টিটিউট বা চীনের সিনোফার্মের টিকাসহ অন্যান্য মাধ্যম থেকে ইতোমধ্যেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশে অন্তত ২৪ কোটি ডোজ ভ্যাক্সিন সংগ্রহের। প্রতি মাসেই পর্যাপ্ত সংখ্যক টিকা দেশে আসছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকেও টিকা আসা শুরু হয়েছে। বর্তমানে টিকাদানে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে এক দিনেই প্রায় ৮০ লাখ মানুষকে ভ্যাক্সিন প্রদান করে সক্ষমতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে দেশের বয়স্ক নাগরিকদের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের টিকা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলমান করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক খুরশিদ আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাত করোনা প্রতিরোধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন এ করোনাকে আর ওপরের দিকে উঠতে না দিতে সবার সম্মিলিত সহযোগিতা লাগবে। সবাই মিলে আরেকটু সচেতনতা বজায় রাখতে পারলে দেশে করোনা আরও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।