পিটিআই ইনস্ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনাঃ জেলা টিচার্স ট্রেনিং ইনিস্টিটিউটের (পিটিআই) ইনস্ট্রাক্টর (আইসিটি) আবদুল্লাহ আল সাখাওয়াত হোসেন। তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত, প্রথম স্ত্রীর তথ্য গোপন করে বিয়ে ও ভ্রূণ হত্যাসহ কৌশলে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর হুমকির মাধ্যমে তালাক দিতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলেছেন এক শিক্ষিকা।
অভিযোগকারী ওই শিক্ষিকা পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে ওই শিক্ষিকা পাবনা পিটিআইয়ের সুপারিন্টেনডেন্টের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ঘটনার বিস্তারিত লিখে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের প্রায় দেড় মাস পার হলেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় হতাশা, অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওই শিক্ষিকা।
লিখিত অভিযোগের একটি কপি হাতে পাওয়ার পর সেই তথ্য নিশ্চিতে দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান চালানো হলে লিখিত অভিযোগকারী ছাড়া আরও তিনজন শিক্ষিকার খোঁজ পায় যুগান্তর। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে একই কর্মস্থলে চাকরি করা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারিসহ বেশকিছু অভিযোগের ব্যাপারে অন্যান্য ভুক্তভোগীরা মৌখিকভাবে তৎকালীন সুপারিন্টেনডেন্টের কাছে অভিযোগ করলেও নিজের সম্মানের ভয়ে লিখিত অভিযোগ দেননি কেউই।
তবে জেলার সাঁথিয়া উপজেলার এক ভুক্তভোগী ২১-২২ সালে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
২০১৭ সালে এই কর্মকর্তার নারী কেলেংকারির প্রতিকার চেয়ে পাবনার টিচার্স ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট রাতের আঁধারে পোস্টারিংও করেছিল অজ্ঞাতভাবে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে একই কর্মস্থলে থাকা এই কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে গেছেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে ডিপিএড প্রশিক্ষণ নিতে পাবনা টিচার্স ট্রেনিং ইনিস্টিটিউটে (পিটিআই) যোগ দেন অভিযোগকারী ওই শিক্ষিকা। প্রশিক্ষণ চলাকালে ইনস্ট্রাক্টর (আইসিটি) আবদুল্লাহ আল সাখাওয়াত হোসেন বরাবরের মতো টার্গেট করেন ওই শিক্ষিকাকে। প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাভাবে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন তিনি।
এদিকে কয়েক বছর আগে ওই শিক্ষিকার পূর্বের স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। আবদুল্লাহ আল সাখাওয়াত হোসেন সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ওই শিক্ষিকাকে তার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে প্রলুব্ধ করেন। একপর্যায়ে পূর্বের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় ওই শিক্ষিকার। দুই সন্তান নিয়ে কর্মস্থলের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সময় প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আবদুল্লাহ আল সাখাওয়াত হোসেন বিয়ের প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষিকাকে।
কিন্তু প্রথম স্ত্রী থাকায় বিয়েতে অস্বীকৃতি জানান ওই শিক্ষিকা। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপে নিজের গলায় কখনো ছুরি ধরে আবার কখনো গলায় দড়ি লাগানোর ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিয়ের জন্য জোরাজুরি করতে থাকেন ওই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে ওই শিক্ষিকা প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার শর্তে বিয়েতে রাজি হন এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় গিয়ে ২০২২ সালের ১১ আগস্ট বিয়ে করেন। এরপর ওই শিক্ষিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাকে জোরপূর্বক পাবনা সদর হাসপাতালে একটি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে গর্ভপাত করান আবদুল্লাহ আল সাখাওয়াত হোসেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া বিয়ের আগে এবং পরে মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ওই শিক্ষিকার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন আবদুল্লাহ আল সাখাওয়াত হোসেন। কিন্তু চতুর এই কর্মকর্তা ছয় মাসের মাথায় দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করেই ওই শিক্ষিকাকে দিয়ে জোরপূর্বক চাকরির ভয়ভীতি দেখিয়ে তালাকনামায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। আরও উল্লেখ রয়েছে প্রত্যেক ট্রেনিংয়ের নির্দিষ্ট নারী শিক্ষিকাদের টার্গেট করে এই কর্মকর্তা নানা কেলেংকারি করে থাকেন। অনেকেই মানসম্মান বা চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা বলেন, প্রতিবছর প্রশিক্ষণের সময় বেশকিছু নারী প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষিকাকে টার্গেট করেন আবদুল্লাহ আল সাখাওয়াত হোসেন। তার কাজই নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলা। চাকরির ভয়ে অনেকেই মুখ খোলেন না। অনেক নারীর জীবন নষ্ট করেছেন তিনি। আমার মতো আর কোনো নারীর জীবন যেন নষ্ট না হয় সে জন্য পিটিআইয়ের সুপার স্যারের মাধ্যমে মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনো কোনো বিচার পাইনি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি তো সবকিছু আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। অভিযোগকারীর সঙ্গে আপনি যোগাযোগ করেন। আরও তথ্য পেতে পারেন। দুজনের সম্মতিতে তালাক হয়েছে। হয়তো বা আমার পাপ ছিল। আমি চাই প্রায়শ্চিত্ত হোক।
নারী কেলেংকারির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যে খুব ভালো মানুষ সেটা বলছি না। তবে কাউকে জোরপূর্বক কী কিছু করা যায়?
এ ব্যাপারে পাবনা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপার (চলতি দায়িত্ব) ফরিদ উদ্দিন হায়দার বলেন, ঘটনাটি অনেক আগের। আমারও আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন সেই সময়কার। এটা পিটিআইয়ের ভেতরের ব্যাপার না। তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ বিষয়ে আমার করার কিছুই নেই।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়