পানির তলায় বন্দর নগরী চট্টগ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ভারী বৃষ্টিতে বেশির ভাগ এলাকাই ডুবেছে পানিতে। এ সময় পাহাড় ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন আরো তিনজন। এই ঘটনার পর বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়ায় দিনভর বিদ্যুৎবিহীনভাবে কাটাতে হয়েছে বেশির ভাগ বাসিন্দার। টানা চার দিন বৃষ্টিপাতের পর গতকাল সোমবার সকালে সূর্যের দেখা মিললেও পানি নামার ধীরগতিতে বেশির ভাগ এলাকা দিনভর পানিতেই তলিয়ে ছিল। সড়ক, অলি-গলি পানি নিমজ্জিত থাকায় রিকশা-ভ্যানে চড়ে চরম ভোগান্তি নিয়ে নারী-শিশুসহ সব বয়সী মানুষ চলাচল করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন এত পানি চট্টগ্রামের মানুষ অতীতে দেখেনি।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর টানা বৃষ্টিতে মধ্যরাতেই নগরীর বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, আকবরশাহ, ঝাউতলা, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডিসি রোড, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়াসহ নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। কোনো কোনো জায়গায় সড়কে মাছ ধরতেও দেখা যায়। বেশির ভাগ এলাকার নিচতলার বাসিন্দা এবং দোকানিদের পানি সেচতে দেখা যায়। তাছাড়া বেশির ভাগ বাসার আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানিরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিকেলের দিকে আবার বৃষ্টি শুরু হলে জনমনে উদ্বেগ দেখা দেয়।
হাঁটু পানির নিচে চসিক মেয়রের বাড়ি : কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে নগরীর নিম্নাঞ্চলের সাথে পানি উঠেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাড়িতেও। এমনকি মেয়রের সামনের গলিতেও ছিল কোমর সমান পানি। এ সময় মেয়র বাসায় অবস্থান করছিলেন।
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল ৩ জনের : নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় বাসার সামনে পানি বাড়তে দেখে আইপিএস বন্ধ করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া হালিশহর কে ব্লক এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মায়াজ মাহমুদ আনওয়ার (১৬) নামে এক কলেজছাত্র মারা গেছেন।
পাঁচলাইশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বলেন, পাঁচলাইশ কাতালগঞ্জ ১ নং রোড খান বাড়িতে কর্মরত অবস্থায় খান বাড়ির বাসার সামনে পানি জমতে দেখে সিঁড়ির নিচে থাকা আইপিএসের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে যায় গাড়িচালক মোহাম্মদ হোসেন (৩৮) ও দারোয়ান আবু তাহের (৬৫)। এ সময় শর্ট সার্কিটে তারা বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত হন। তাদের উদ্ধার করে নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সকাল সাড়ে ৭টায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে নগরের হালিশহর কে ব্লক এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মায়াজ মাহমুদ আনওয়ার (১৬) নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর রাতে এ ঘটনা ঘটে। মায়াজ মাহমুদ বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের নাটমুড়া গ্রামের ব্যাংকার তালাত মাহমুদের ছেলে। মায়াজ মাহমুদ বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র।
পাহাড় ধসে শিশুর মৃত্যু : এদিকে গ্রিনভ্যালি এলাকায় পাহাড় ধসে মো: আবু রায়হান (১২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে কুমিল্লা লাকসামের দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে স্থানীয় মামুনের পাহাড় ধসে পাশের একটি দেয়াল ভেঙে দোকানের ওপর পড়ে। এতে দোকানে থাকা ওই শিশুর মৃত্যু হয়। গতকাল ভোরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন। গোসল করানোর পর তার মৃতদেহ কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।