পাঁচ শতাংশ ছাড়াল করোনা শনাক্তের হার
নিউজ ডেস্ক।।
দেশে ১৫ সপ্তাহ পর দৈনিক নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ফের ৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের হাসপাতালগুলোতে উপসর্গযুক্ত রোগীর চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আজ থেকে বড়দের পাশপাশি স্কুল শিক্ষার্থীদের (১২ থেকে ১৮ বছর) টিকাদান শুরু হবে, চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশ থেকে ২০ হাজার ৮৯০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ২০ হাজার ২০৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় আরও ১ হাজার ১৪৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে। এর আগে সর্বশেষ শনাক্তের হার পাঁচের ওপরে ছিল গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর। সেদিন শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৫৪০টি। পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট করোনা রাগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৯৩ জনে। এছাড়া গত এক দিনে আরও একজনের মৃত্যু হওয়ায় সব মিলিয়ে এ ভাইরাসে ২৮ হাজার ৯৮ জনের মৃত্যু হলো। গত একদিনে যে কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে, তার বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। ময়মনসিংহের একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা গেছে। এদিন দেশের বাকি সাত বিভাগে আর কারও মৃত্যু হয়নি।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং ৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল। সে হিসাবে গত এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। সরকারি হিসাবে এদিন সেরে উঠেছেন ১৭০ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৪ জন সুস্থ হলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীদের মধ্যে ৯০২ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। যা মোট আক্রান্তের মধ্যে ৭৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে দেশের ২৬টি জেলায় একদিনে কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ২৮ জেলা। আর ঢাকা বিভাগে শনাক্ত বেশি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি বাড়ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. মো. আশরাফুল আলম শুক্রবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, করোনা রোগী এবং উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায়, আবারও করোনা ইউনিটে পর্যায়ক্রমে করোনা শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। প্রস্তুতির অংশ হিসাবে নতুন ভবনের ৭ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত কয়েকটি ওয়ার্ড ফাঁকা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে উপসর্গ নিয়ে এখানে দৈনিক ১২ থেকে ১৫ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে টিকা নিয়েছেন এমন রোগীও রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের সময় গত বছর জুলাই-আগস্ট সময়ে দৈনিক শনাক্তের হার ৩০ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর তা নামতে নামতে ২ শতাংশের নিচে চলে আসে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই বিশ্বে শুরু হয় ওমিক্রনের ত্রাস। ৩ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ৩ শতাংশ এবং ৫ জানুয়ারি তা ৪ শতাংশ ছাড়ায়। এর দুই দিনের মাথায় তা ছাড়িয়ে গেল পাঁচ শতাংশের ঘর। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। গত বছর ৩১ আগস্ট তা ১৫ লাখ পেরিয়ে যায়। এর আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশজুড়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু আজ : এদিকে জন্মনিবন্ধন তথ্য দিয়ে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের মাধ্যমে ১ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু হচ্ছে আজ। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশজুড়ে এসব শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়া শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এর আগে ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মো. আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। আদেশে বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন নেই এবং যাদের ১৬ ডিজিটের নিবন্ধন নম্বর নেই, তাদের পুনরায় নিবন্ধন করতে হবে। টিকা গ্রহণযোগ্য শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানভিত্তিক তালিকা ৭ জানুয়ারির মধ্যে সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানোর বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের নিশ্চিত করতে হবে। ৮ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকা দেওয়ার নির্ধারিত দিনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।