পরীক্ষার উত্তরপত্র হারিয়ে ফেললেন শিক্ষক, শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা
কুমিল্লাঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। ফলে সেশনজটের শঙ্কায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম সাদিয়া জাহান। তিনি ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘পিএইচএআরএম-২২০২: ফার্মাসিউটিক্যাল অরগানিক কেমিস্ট্রি-২’ শিরোনামের কোর্স শিক্ষক ছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি তদন্তাধীন অবস্থায়ই ওই শিক্ষক বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন। গত ১৩ এপ্রিল ঈদের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ কার্যদিবসে এ চিঠি পেয়েছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গেল বছরের ৬ নভেম্বর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সেমিস্টারের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে ‘পিএইচএআরএম-২২০২: ফার্মাসিউটিক্যাল অরগানিক কেমিস্ট্রি-২’ কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের এ কোর্সটি না থাকায় শুধুমাত্র মানোন্নয়ন দেয়া পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রগুলো পরীক্ষার পর সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক সাদিয়া জাহানকে বুঝিয়ে দেন পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা। তবে ওই পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করতে গিয়ে উত্তরপত্র না পেয়ে সাদিয়া জাহানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরপত্র খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি জানান পরীক্ষা কমিটির সভাপতি জয় চন্দ্র রাজবংশীকে। এরপর তার মাধ্যমেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি উল্লেখ করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান সাদিয়া। যদিও এ বিষয়ে কমিটির বাকি দুই সদস্য বিদ্যুৎ কুমার সরকার ও মো: কামরুল হাসান কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে সাদিয়া জাহান বলেন, উত্তরপত্রগুলো আমার কক্ষেই ছিল। মূল্যায়ন করতে গিয়ে সেগুলো খুঁজে না পেয়ে আমি পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে জানাই। এরপর তার থেকে অগ্রায়ন নিয়েই আমি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর সাদিয়া জাহান থেকে চিঠি পেয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনকে জানালে তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. রায়হান উদ্দিনকে আহ্বায়ক, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ আইনুল হককে সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দিনক্ষণ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও গেল মাসের শেষের দিকে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. রায়হান উদ্দিন।
তিনি বলেন, আমাদেরকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা শিগগির সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেব।
এদিকে তদন্ত চলাকালীনই বিদেশ যাওয়ার জন্য অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন সাদিয়া জাহান। আবেদনের পর গত বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) শেষ কার্যদিবসে তড়িঘড়ি এ চিঠি পান তিনি। যদিও একই ধরনের অনাপত্তিপত্র পেতে অন্যান্য শিক্ষকদের দেড় থেকে দুই মাসেরও বেশি সময় অপেক্ষা করা ও ভোগান্তি পোহানোর নজির রয়েছে। শিক্ষকরা দাবি করছেন, ভিসিপন্থী শিক্ষকদের গ্রুপের সদস্য হওয়ায় একটি বিষয় তদন্তাধীন থাকার পরও বিনা ভোগান্তিতে তিনি অনাপত্তিপত্র পেয়ে গেছেন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও খুদেবার্তা পাঠিয়েও যথারীতি সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমার জানার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। তাই আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়