পরামর্শক কমিটির ১০ সুপারিশ
অনলাইন ডেস্ক ।।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ জারি করেছে। আগামী ৫ মে পর্যন্ত চলবে এই বিধিনিষেধ। তবে লকডাউনের মতো একটি বিষয় দীর্ঘদিন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এতে মানুষের জীবন-জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিন্তু লকডাউন তুলে নিলেও সংক্রমণ যাতে না বাড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে 'লকডাউন' থেকে বেরিয়ে আসার একটি কৌশল ঠিক করেছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি। এই কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুলস্নাহ বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে ১০টি সুপারিশ করেছেন তারা।
এ সংক্রান্ত সুপারিশগুলো ইতোমধ্যে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এসব সুপারিশ হলো-
১. অবশ্যই মুখে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন মুখে মাস্ক থাকে। মাস্ক না পরলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২. অফিসে উপস্থিতি অর্ধেক করার প্রস্তাব করেছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। উপস্থিতি এক-তৃতীয়াংশ হলে ভালো হয়। অফিসগুলোয় ভার্চুয়াল মিটিংকে উৎসাহ দিতে হবে।
৩. গণপরিবহণ যেন তাদের সক্ষমতার ৫০ ভাগ যাত্রী বহন করে। এই নিয়ম দীর্ঘদিনের জন্য চালু থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রাইভেট এবং তিন চাকার ট্যাক্সি একজন করে যাত্রী বহন করবে। অবশ্য রিকশা, মোটরসাইকেল এবং বাই-সাইকেলে কোনো সমস্যা নেই।
৪. খাবারের দোকান, মুদি দোকান, মার্কেট এবং শপিং-মল দিনের লম্বা সময়ের জন্য খোলা রাখা। স্বল্প সময়ের জন্য খোলা রাখলে মানুষের চাপ বাড়ে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়। কাঁচা বাজারগুলো উন্মুক্ত জায়গায় পরিচালনা করতে হবে। রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া যাবে না। হোম ডেলিভারি সার্ভিসকে উৎসাহ দিতে হবে।
৫. জনসমাবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মসজিদ, মন্দির এবং চার্চে যাতে ভিড় না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রার্থনায় সীমিতসংখ্যক মানুষ যেতে পারবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
৬. যারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে। নিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের শারীরিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৭. কলকারখানার প্রবেশমুখে শ্রমিকদের জন্য স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারখানার ভেতরে মাস্ক পরে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
৮. যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি না হয় ততদিন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে উৎসাহ দিতে হবে।
৯. বিনোদন এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্র খোলা যাবে না।
১০. আইসোলেশন, কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। সংক্রমণ রোধ করার জন্য এটা ভীষণ প্রয়োজন। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা আসবেন তাদের দ্রম্নত খুঁজে বের করে আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। টেস্ট করার সুবিধা বাড়াতে হবে। টেস্টিং সেন্টারগুলোয় যাতে ভিড় না হয় সেজন্য সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় পরামর্শক কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করা এবং মনিটরিং জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক শহীদুলস্নাহ বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অব্যাহত না রাখলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়ে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।