লক্ষ্য স্থির করা
একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ঠিক করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পড়ার পরিকল্পনা করতে হবে। প্রয়োজনে একটি দীর্ঘ লক্ষ্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যেমন– আগামী ছয় মাস পর যদি কোনো পরীক্ষার তারিখ থাকে এবং লক্ষ্য থাকে যদি সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ করা। তবে প্রথমেই সম্পূর্ণ সিলেবাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে যে, আমাকে প্রথম সপ্তাহে এই এই টপিক পড়ে শেষ করতে হবে। লক্ষ্যের প্রতি অবিচল না থাকলে পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখা যাবে না।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা
খাদ্যাভ্যাস একজন ছাত্রের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাঙ্ক ফুড ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার পরিহার করা ও সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করা শরীরের জন্যও উপকারী। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মৌসুমি ফল খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। দীর্ঘসময় পড়াশোনা করার জন্য আমাদের খাদ্যাভ্যাসের ও পরিবর্তন নিয়ে আসতে হয়। তা ছাড়া অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ শরীরে ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি করে। খাবার টেবিলের পাশে পানির বোতল নিয়ে বসলেও ভালো।
প্রয়োজনীয় সবকিছু হাতের কাছে রাখা
পড়তে বসার আগে সব কাজ শেষ করে ও প্রয়োজনীয় সবকিছু পাশে রেখে তারপর পড়াশোনা করা উচিত, যাতে আর বারবার উঠতে না হয়। যেমন কেউ পড়তে বসল হঠাৎ করে মনে হলো তার কাছে নীল কলম নেই, এরপর সে ওই কলম সংগ্রহ করার জন্য আবার টেবিল ছেড়ে উঠে গেল। এভাবে বারবার পড়া ছেড়ে উঠলে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে। আবার নতুন করে পড়া শুরু করতে হয়।
পড়ার পরিবেশ তৈরি করা
খেলতে গেলে যেমন খেলার স্থান উপযুক্ত হতে হয়। তেমনি পড়ার জন্য প্রয়োজন পড়ার পরিবেশ। দীর্ঘসময় পড়ার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা চাই। পড়ার স্থানটি কোলাহল মুক্ত ও জঞ্জাল মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও থাকা দরকার। পড়ার টেবিলটি গোছানো হলে পড়ায় মনযোগ দেওয়া সহজ হয়। পড়তে শুরু করার আগেই কী কী বিষয় পড়া হবে, তা ঠিক করে সেসব বিষয় হাতের কাছে রেখে পড়া শুরু করতে হবে।
চাই পর্যাপ্ত ঘুম ও শারীরিক ব্যায়াম
দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকারি। বর্তমানে অতিরিক্ত ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করার কারণে দেরি করে ঘুমানোর একটি অভ্যাস ছাত্রদের মাঝে প্রকট আকার ধারণ করেছে। মস্তিষ্ক ঠান্ডা রেখে দীর্ঘসময় পড়াশোনার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। রাতে কোনো কারণে ঘুমের বিঘ্ন ঘটলে আমাদের উচিত অন্য কোনো সময় ঘুমিয়ে শরীর ঠিক রাখা। চিকিৎসকদের মতে, ঘুমের অভাব মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শারীরিক ব্যায়ামও একজন মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু হালকা এক্সারসাইজ শরীরকে সারা দিন চনমনে রাখতে পারে। এর পাশাপাশি যদি খেলার সুযোগ থাকে তাহলে তা মিস করা কোনোভাবেই উচিত হবে না। খেলাধুলা মানুষের মস্তিষ্ক চাঙা রাখে, যা পড়াশোনা করার জন্য খুবই দরকারি।
টেবিলে বসার অভ্যাস করা
দীর্ঘসময় পড়াশোনা করা একটি অভ্যাসের ব্যাপারও বটে। হঠাৎ করে এ অভ্যাস রপ্ত করা যায় না। বলা হয় যে, নতুন কোনো অভ্যাস রপ্ত করার জন্য টানা ২১ দিন সে নতুন অভ্যাস অনুযায়ী চলতে হয়। ২১ দিন কোনো কিছু টানা করলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। শুরুতে পড়াশোনায় মনযোগ না আসলেও টেবিল ছেড়ে ওঠা যাবে না। বই বা পড়ার বিষয়বস্তু নিয়ে টেবিলেই বসে থাকতে হবে। একসময় তা অভ্যাসে পরিণত হবে ও পড়ায় মনঃসংযোগ তৈরি হবে। জে কে রাওলিং ও স্টিফেন কিংয়ের মতো বিখ্যাত লেখকেরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে কিছু না লিখে বসে কাটিয়েছেন। এটা শুধু মনের একাগ্রতা তৈরি করার জন্য।
নিয়মিত সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করার মাধ্যমে মনকে কেন্দ্রীভূত করা যায়। মুসলিম হলে নামাজ পড়া অন্যান্য ধর্মের হলে নিজ নিজ উপায়ে প্রার্থনা করা উচিত। অনেক বিশেষজ্ঞগণ এ ক্ষেত্রে ধ্যান করার কথাও বলেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ধর্মীয় প্রার্থনা যে কোনো ব্যক্তির মনে প্রশান্তি তৈরি করে, যা দীর্ঘক্ষণ পড়াশোনায় সহায়ক।
মতিন সরকার নিশাত, সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার (অ্যাকাউন্টিং), ৪০তম বিসিএস।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৫/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়