পঞ্চম শ্রেণির প্রস্তুতি- বিজ্ঞান
আফরোজা বেগম
সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা, ঢাকা
পদার্থ ও শক্তি
প্রশ্ন : শক্তির ৫টি রূপের নাম লিখ।
উত্তর : কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। শক্তির বিভিন্ন রূপ রয়েছে। শক্তির ৫টি রূপের নাম নিচে দেওয়া হলো-
* বিদ্যুৎ শক্তি * আলোক শক্তি * শব্দ শক্তি
* তাপ শক্তি * রাসায়নিক শক্তি
প্রশ্ন : তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়া কী কী?
উত্তর : তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়া। যথা-
* পরিবহণ → কঠিন পদার্থ
* পরিচলন → তরল পদার্থ
* বিকিরণ → বায়বীয় পদার্থ
প্রশ্ন : কীভাবে আলো সঞ্চালিত হয়?
উত্তর : আলো এক প্রকার শক্তি। ইহা আমাদের চোখে দর্শনের অনুভূতি জাগায়। আলো সরল বা সোজা পথে চলে। তবে এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশের সময় আলো একটু বেঁকে প্রবেশ করে।
প্রশ্ন : পরমাণু কী?
উত্তর : পরমাণু : পদার্থের সূক্ষ্ম কণাই হলো পরমাণু। ইহা প্রতিটি পদার্থের মূল গঠন উপাদান।
প্রশ্ন : গিটার বাজানো হলে কোন ধরনের শক্তি উৎপন্ন করে?
উত্তর : গিটার এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র। এই বাদ্যযন্ত্র দ্বারা সুর তোলা হয়। তাই গিটার শব্দ শক্তি উৎপন্ন করে।
প্রশ্ন : যখন টিভি চালানো হয় তখন শক্তির কী কী রূপান্তর ঘটে?
উত্তর : টিভি হচ্ছে আধুনিককালের একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। ইহা বিনোদনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। টিভি বিদ্যুৎ বা ব্যাটারির সাহায্যে চলে। জল-বিদ্যুৎ থেকে টারবাইনের মাধ্যমে বা সূর্য থেকে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বা বায়ু থেকে টারবাইন ঘুরিয়ে বায়ুকলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। আবার ব্যাটারিতে রাসায়নিক পদার্থ থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হয়। আবার নানা উৎস থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ দিয়ে টিভি চলে। টিভিতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ শক্তি, তাপ, শব্দ ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
সুতরাং টিভিতে বিদ্যুৎ শক্তি আলো ও শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
বিদ্যুৎ শক্তি → টিভি → ১. শব্দ শক্তি ২. আলোক শক্তি ৩. তাপ শক্তি
রেখা চিত্র : টিভিতে শক্তির রূপান্তর
প্রশ্ন : ঠান্ডা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ধরে রাখলে হাত ঠান্ডা হয়ে যায়। তোমার বন্ধু মনে করে গ্লাসের ঠান্ডা হাতে চলে যাওয়ার কারণে হাত ঠান্ডা হয়ে যায়। তার ধারণাটি কী সঠিক? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ঠান্ডা পানির গ্লাস হাত দিয়ে ধরে রাখলে হাত ঠান্ডা হয়ে যায়। আমার বন্ধু মনে করে গ্লাসের ঠান্ডা হাতে চলে যাওয়ার কারণে হাত ঠান্ডা হয়ে যায়। তার ধারণা সঠিক নয়। কারণ পদার্থের বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম হলো, তারা গরম বস্তু থেকে তাপ শোষণ করে নিজের তাপমাত্রা গরম বস্তুটির সমান না হওয়া পর্যন্ত এ তাপ শোষণ চলতে থাকে। ফলে গরম বস্তুটি তাপ হারিয়ে তা ঠান্ডা হয়। অপরদিকে ঠান্ডা বস্তু গরম বস্তুর বর্জিত তাপ শোষণ করে তা গরম হয়। অর্থাৎ ক্যালরিমিতির নিয়ম অনুসারে-
বর্জিত তাপ = গৃহীত তাপ
আমার বন্ধু ঠান্ডা পানির গ্লাস ধরার ফলে পদার্থের ধর্ম অনুসারে হাতের তাপ গ্লাসের ঠান্ডা পানি শোষণ করেছে। ফলে হাত তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হয়েছে। আর গ্লাসের ঠান্ডা পানি হাতের তাপ শোষণ করে তাপমাত্রা বাড়িয়েছে। গ্লাসের ঠান্ডা হাতে যায়নি। ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে হাত তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হয়েছে। তাই আমার বন্ধুর ধারণাটি ভুল ছিল।
প্রশ্ন : যখন পাতিলে ভাত রান্না করা হয়, তখন তাপ কীভাবে সঞ্চালিত হয়?
উত্তর : ভাত রান্নার সময় পানি ও চাল দিয়ে চুলায় বসানো হয়। চুলায় আগুন জ্বালাতে হয়। প্রথম কঠিন উপাদান দ্বারা গঠিত পাত্র পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ শোষণ করে। পরে পাত্র থেকে তাপ পরিচলন পদ্ধতিতে পানি গ্রহণ করে। এ পদ্ধতিতে প্রথমে পাত্রের তলার পানি তাপ শোষণ করে তা প্রসারিত ও হালকা হয়। তখন পাত্রের উপরের পানি অপেক্ষাকৃত ভারী ও ঠান্ডা থাকে। তাই ভারী ও ঠান্ডা পানি পাত্রের নিচের দিকে পাত্রের দেয়াল বেয়ে নিচে নামতে থাকে। আর পাত্রের তলার গরম ও হালকা পানি পাত্রের ওপরের দিকে উঠে আসে। পাত্রের তলার ও উপরের দিকের পানির তারতম্যের ভিত্তিতে দুটি সে স্রোত দুটির একটি ঊর্ধ্বগামী ও অপরটি নিুগামী। এ স্রোতকে পরিচলন স্রোত বলে।
সুতরাং যখন পাতিলে ভাত রান্না করা হয় তখন তাপ পরিচলন পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়।
প্রশ্ন : বাড়ির আশপাশে বৃক্ষরোপণ করে কীভাবে শক্তি সংরক্ষণ করা যায়?
উত্তর : কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট নিয়মে গাছ লাগানোকে বৃক্ষরোপণ বলে। এ পৃথিবীতে গোটা জীবজগতের মধ্যে একমাত্র সবুজ উদ্ভিদ বা বৃক্ষই সালোক সংশ্লেষণ পদ্ধতিতে সূর্যের আলোকে খাদ্য তথা রাসায়নিক শক্তি হিসাবে নিজের মূল পাতা, ফুল, ফল ও কাণ্ডে জমা রাখে। পরবর্তীতে মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণী সেই জমাকৃত খাদ্যকে শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি হিসাবে খেয়ে থাকি। এভাবে প্রয়োজনে সংরক্ষিত শক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সুতরাং, গাছ লাগিয়ে অর্থাৎ বৃক্ষরোপণ করে শক্তিকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। তাই বেশি করে বৃক্ষরোপণ করলে বেশি শক্তি সংরক্ষিত হয়।