পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব পাচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা
ঢ্যাকাঃ আগামী বছরের জুনে শেষ হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ। পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য সামনে রেখে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রারম্ভিক কাজ শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। জানা গেছে, নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য এরই মধ্যে কৌশলগত কাঠামো তৈরির কাজ শেষ করে পরকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) খসড়া ধারণাপত্র প্রণয়ন করছে।
পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
জানা গেছে, নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব পাচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়ন। অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
এক ইসঙ্গে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যেসব খাত পিছিয়ে রয়েছে, সেগুলোকে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আমরা এরই মধ্যে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি। এখন কৌশলগত কাঠামো তৈরির কাজ করা হয়েছে। এর পরই সব মন্ত্রণালয়ের তথ্য সংগ্রহ করে অংশীজনদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে একটি সময়োপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
কর্মকর্তারা জানান, নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কী থাকছে সেটা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। একই সঙ্গে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যেসব খাত পিছিয়ে রয়েছে সেগুলোকে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়নে থাকবে বিশেষ গুরুত্ব। এ ছাড়া রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন লক্ষ্য অর্জনকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
জিইডি সূত্রে জানা গেছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অবকাঠামো খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। কারণ অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে, এখন দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।
এ ছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যবর্তী মূল্যায়নে কয়েকটি খাত ছাড়া বেশির ভাগ খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সে ক্ষেত্রে আর্থিক সূচক এবং উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কোনো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এমনকি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এডিপিতে বরাদ্দ নিয়ে অসামঞ্জস্য দেখা গেছে, যাতে পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পূরণে আগামী দিনে সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
এদিকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে পরিকল্পনা কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অবস্থা তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্য, উন্নয়ন দর্শন ও কৌশল, প্রক্রিয়াসহ প্রণয়ন অগ্রগতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। কমিশন সভায় নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে জানানো হয়, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪-এর প্রতিফলন ঘটিয়ে এবং উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য সামনে রেখে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া ধারণাপত্র প্রণয়ন করা হচ্ছে। নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের অর্থনীতিবিদ প্যানেল গঠন করা হয়েছে।
নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খাত-উপখাতভিত্তিক ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি প্রণয়নের জন্য চলতি বছরের জুলাই থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তথ্য গ্রহণের কাজ শুরু হবে। সামষ্টিক কাঠামো, ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ইনপুট এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন, অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে জুন ২০২৫-এর মধ্যে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পন্ন করা হবে। উচ্চ পর্যায়ের অর্থনীতিবিদ প্যানেলের দিকনির্দেশনায় খসড়া ধারণাপত্র চূড়ান্ত করে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় অনুমোদন নেওয়া হবে। এর পরই চলতি বছরের জুলাই থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। খসড়া ধারণাপত্র অনুমোদনের পর সামষ্টিক কাঠামো, ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন এবং অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পন্ন করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/০২/২০২৪