নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি ছাত্র জোটের
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চার অবাধ, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে জনবিচ্ছিন্ন না করে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত করার আহবান জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ৷
ব্এৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা এবং বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া এ দাবি জানান।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জনবিচ্ছিন্ন কোন সত্ত্বা নয় বরং জনকল্যাণে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি ও অবাধ জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হলো এই প্রতিষ্ঠান। ঐতিহাসিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন জ্ঞান চর্চার স্বার্থে রাষ্ট্রের শাসকদের প্রভাবমুক্ত থাকার ধারণাটি সুপ্রতিষ্ঠিত কিন্তু সাধারণ জনগণের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক কখনোই বৈরি ছিলো না ৷ উপরন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি গৌরবময় ইতিহাসের সাথে শাসকদের বিরুদ্ধে এদেশের ছাত্র, শ্রমিক, মেহনতী জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো । এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে আবার কৃত্রিমভাবে সাধারণ জনগণকে ছাত্রদের প্রতিপক্ষ বানানো হচ্ছে। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে আওয়ামী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার চরম বাণিজ্যিকরণ, শিক্ষা ও গবেষণার গুরুত্বকে উপেক্ষা করা, শিক্ষক ও উপাচার্য নিয়োগে দলীয়করণ এবং অবাধ দুর্নীতি, লুটপাট, অগণতান্ত্রিকতা শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের পেছনে প্রধানত দায়ী। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ভয়াবহ দখলদারিত্ব, সন্ত্রাস, নির্যাতনের মুখে ক্যাম্পাসের ভেতরেও ছাত্ররা নিরাপদ নয়। অথচ এই সংকটগুলোতে ভ্রুক্ষেপ না করে শিক্ষার পরিবেশ ও ছাত্রদের নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে জনসমাগম নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রশাসন অধিক তৎপর। ফলে স্বভাবতই এর উদ্দেশ্য ভিন্ন, প্রভাব সদূরপ্রসারী।
তারা আরও বলেন, সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় রাবি ছাত্রলীগ ও স্থানীয় যুবলীগ, আওয়ামীলীগের সম্পৃক্ততা দৃশ্যমান । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যার্থতায় সংঘর্ষের মাত্রা তীব্র হয়েছে৷ এই ঘটনার পেছনে ক্ষমতাসীনদের উগ্র চর্চা, প্রশাসনের ব্যার্থতা, শিক্ষার্থীদের আবাসন, পরিবহণ সংকটসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত থাকলেও রাবি উপাচার্য বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে অতি সহজে শিক্ষার্থীদের আইওয়াশের চেষ্টা করেছেন। অথচ বিগত কয়েক বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সাথে স্থানীয়দের বিরোধের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি ঘটনা সহিংসতায় রূপ নেয়ার নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের নানা গ্রুপের ভূমিকাই প্রধান। এমনকি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বখাটে ও ছিনতাই চক্রের সাথে প্রত্যক্ষভাবে ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীনদের সম্পৃক্ততা থাকলেও এসব ক্ষেত্রে প্রশাসন নির্লিপ্ত ! ছাত্ররা অপরাধীদের চিহ্নিত করলেও প্রশাসন অজ্ঞাতনামা মামলা করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূল অপরাধীরা শাস্তি পায় না। কিন্তু বরাবরই ক্ষমতাসীন ও এই ক্ষমতাকাঠামোয় সুবিধাভোগীদের অপকর্মের দায় সাধারণ জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়৷ নিরাপত্তার অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে জনবিচ্ছিন্ন করার নানা চটকদার পন্থা বেছে নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে জনবিচ্ছিন্ন করার প্রকল্পে শাসকদের সদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য যুক্ত । প্রতিটি নিপিড়নমূলক শাসন কাঠামোয় শোষণের প্রয়োজনে জনগণকে নানাভাবে বিভক্ত করতে হয় । সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত করা গেলে এর মধ্য দিয়ে সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন, সংবেদনশীল, সমাজ ও রাজনীতি সচেতন মনন গড়ে তোলার প্রক্রিয়া সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দমন পীড়ন আরো সুসংহত হবে ৷ ঐতিহাসিকভাবে রাষ্ট্রীয় শোষণের বিরুদ্ধে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেভাবে জনগণের অংশ হয়ে গণ আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেছে, ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই সংগ্রাম গড়ে উঠেছে তাকে বর্তমান ফ্যাসিস্ট শাসকরা ভয় পায়৷ ফলে বিশ্ববিদ্যালয়কে যতবেশি জনবিচ্ছিন্ন করা যাবে, ফ্যাসিবাদী শাসন ততবেশি পাকাপোক্ত হবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন জনগণের অর্থে পরিচালিত সর্বজনের বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বহিরাগত' শব্দটি অবান্তর ৷ বরং মুক্ত চর্চা ও জ্ঞাণ সৃজনের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় নানা বৈচিত্র্যকে ধারণ করে৷ এর প্রয়োজনেই শিক্ষা-গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সন্ত্রাস, দখলদারিত্বমুক্ত, গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলার আহবান জানানো হয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়