‘নিম্নমানের সামগ্রী’ দিয়ে স্কুল ভবন, হস্তান্তরের আগে মেরামত
জয়পুরহাটঃ জেলার ক্ষেতলাল উপজেলায় একটি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠার পর সেটি আবার মেরামত করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে তুলে জেলা শিক্ষা কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী বিভাগে চিঠি পাঠায় ওই বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।
সরজমিনে জানা যায়, উপজেলার ঐতিহাসিক হিন্দা মসজিদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত এই হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ঐতিহাসিক নিদর্শনটি পরিদর্শন করতে এখানে দেশ-বিদেশের নানা পর্যটক ও দর্শনার্থী আসেন বলে বিদ্যালয়টিকে সব দিক দিয়ে পরিপাটি রাখেন শিক্ষক-অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও লেখাপড়ার মানসহ উপস্থিতিও ঈর্ষণীয়।
এসব কারণে এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০২২ সালের ২৪ জুলাই ১ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৭৮৩ টাকা ব্যয়ে তৃতীয় তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৮ অগাস্ট শেষ হয় এর নির্মাণ কাজ।
এ অবস্থায় শিক্ষা বিভাগের কাছে তড়িঘড়ি হস্তান্তর করতে জোর তদবির করেন শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
দিনাজপুরের ঠিকাদার মহিদুল ইসলাম এই কাজ পাওয়ার পর তিনি সাব-ঠিকাদার হিসেবে জয়পুরহাটের ফরিদ উদ্দিনের কাছে এই টেন্ডার বিক্রি করে দেন।
ভবনটির ছাদ ও মেঝের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারের ফাটা ফাটা দাগ ও নিম্নমানের রং করা হয়েছে বলে লক্ষ্য করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীসহ এলাকাবাসী।
এ নিয়ে ১৩ ডিসেম্বর ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কাজের জন্য ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে ৮ জানুয়ারি তদন্ত নোটিশ ও ১৭ জানুয়ারি সরেজমিনে তদন্ত করেন জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। তদন্ত শেষে নির্দেশ দেওয়া হলে নতুন স্কুল ভবনটিতে মেরামত কাজ শুরু করা হয়।
নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, ঠিকাদার আগে মিস্ত্রি দিয়ে যে কাজ করেছেন তাতে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার এসে তাদের নতুন করে মেরামতের কাজ দিয়েছেন, এ কাজ চলমান রয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জানায়, তাদের নতুন বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে, নতুন বিল্ডিংয়ের ক্লাস হলে তাদের লেখাপড়ার মনোযোগ আরও বাড়বে। শহরের শিশুরা বহুতল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে, এখন থেকে তারাও এ রকম বড় বিল্ডিংয়ে লেখাপড়া করতে পারবে।
হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবর রহমান বলেন, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার কারায় বিল্ডিংয়ের মেঝে ও ছাদের বিভিন্ন স্থানে ফাটা ফাটা দাগ দেখা দেয়। এ ছাড়া দেওয়ালে নিম্ন মানের রং ব্যবহার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকরা স্থানীয়ভাবে অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর তদন্ত হলে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘর ও ছাদের মেঝে মেরামতের নির্দেশ দেন।”
অনাকাঙ্ক্ষিত আশঙ্কার কথা ভেবে ঠিকাদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করছেন শিক্ষক, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
ওই বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক নাসিমা আক্তার বানু আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা নতুন ভবন পেয়েও উঠতেই পারলাম না, উদ্বোধনের আগেই মেরামত করতে হচ্ছে। নতুন বিল্ডিংতে উঠতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমরা তো আতঙ্কের মধ্যে আছি।
“নতুন ভবনটির মেঝে এখনই ফাটল দেখা দিয়েছে, এখন আমরাসহ কোমলমতি শিশুদের নিয়ে কীভাবে ওই বিল্ডিংয়ে উঠব, আমরা তো ভয় পাচ্ছি।”
এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাক না কেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদার ফরিদ উদ্দিন বলেন, “কাজ খারাপ হয়েছে, ঠিক করা হবে, তাতে সাংবাদিকদের কী? ওখানে সাংবাদিকের কী? আপনাদের এত মাথা ব্যথা কেন? কাজ খারাপ হয়েছে না ভালো হয়েছে তা আমি বুঝব।”
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান নির্মাণ কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের-এলজিইডি প্রকৌশলী।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী রাশেদ ইমরান বলেন, “হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, এর মধ্যে নির্মাণ কাজের কিছু ত্রুটি আমাদের নজরে আসে। এ ব্যাপারে তদন্ত হয়, এরপর ত্রুটিগুলো মেরামতের জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী কাজ চলমান আছে।” বিডিনিউজ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০১/২০২৪