নিবন্ধন জটিলতা নিয়ে শঙ্কা
নিউজ ডেস্ক।।
আগামী শুক্রবার থেকে দেশের ৪৭ জেলায় বসছে করোনার টিকাকেন্দ্র। এসব কেন্দ্র থেকে স্কুলশিক্ষার্থীদের দেয়া হবে করোনার টিকা। কিন্তু ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন না থাকায় অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা পেতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে। ফলে জেলায় জেলায় টিকাকেন্দ্র বসানো হলেও এর সুফল প্রাপ্তি নিয়ে আগেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের জেলাপর্যায়ে টিকাকেন্দ্র স্থাপনের প্রধান টার্গেটই হচ্ছে আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া নিশ্চিত করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশে স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকাকার্যক্রম আরো বেগবান করতেই মূলত আগামী ২৬ নভেম্বর (শুক্রবার) থেকে জেলা পর্যায়ে টিকাকেন্দ্র বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই প্রথম ধাপে ৪৭টি জেলা শহরে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করে ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। যদিও বর্তমানে ৩৫টি জেলায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকাদান চলমান রয়েছে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে জানানো হয়েছে। এর আগে গত ১ নভেম্বর থেকে ঢাকা মহানগরের আটটি স্কুলে ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের টিকাদানকার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে দিনে পাঁচ হাজার করে মোট ৪০ হাজার টিকা দেয়ার কথা থাকলেও সে লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। বর্তমানে প্রতিটি কেন্দ্র দুই থেকে আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগরে নতুন করে আরো একটি কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে।
এ দিকে সরকারের নানা উদ্যোগের অংশ হিসেবেই সারা দেশে টিকাকেন্দ্র চালু করে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন জটিলতায় ধীরগতিতে এগোচ্ছে স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা কর্মসূচি। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের ‘পূর্ণাঙ্গ’ ও ‘সঠিক’ ডাটা বা তথ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) দিতে পারছে না। অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য দেয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানেই দু’বার-তিনবার তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আবার নিবন্ধনের জন্য যেসব শিক্ষার্থীর তালিকা আইসিটি বিভাগে পাঠানো হয়েছে তাদের সবার নাম ‘সুরক্ষা অ্যাপে’ অন্তর্ভুক্তিতেও বিলম্ব হচ্ছে। এ ছাড়া মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর এখন পর্যন্ত তাদের ‘টিকা পাওয়ার’ উপযোগী শিক্ষার্থীদের তালিকাই প্রণয়ন করতে পারেনি।
শুরু থেকেই ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘টিকা পেতে শিক্ষার্থীদেরও সুরক্ষা ‘অ্যাপে’ নিবন্ধন করতে হয়। শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন যদি আমরা সেন্ট্রালি (কেন্দ্রীয়ভাবে) করতে পারতাম তাহলে শিক্ষার্থীদের টিকা পেতে সহজ হতো। বর্তমানে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ডাটা আগে সুরক্ষা অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করতে হচ্ছে। এতে সুরক্ষা অ্যাপের ওপরও লোড (চাপ) বেড়েছে। শাহেদুল খবির চৌধুরী জানান, মাউশির আওতায় ঢাকা মহানগরীসহ ৩৫ জেলায় এ পর্যন্ত মোট দুই লাখ ১১ হাজার ৩৮৬ জন শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে। ঢাকার বাইরে জেলাপর্যায়ে শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হচ্ছে।
এ দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সবস্তরের শিক্ষার্থী মিলিয়ে এ পর্যন্ত মাত্র তিন লাখ ১৫ হাজার ৮৯২ জন শিক্ষার্থী করোনার টিকা নিয়েছে। অথচ শুধুমাত্র ঢাকায় দৈনিক ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকাদানের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। সূত্র আরো জানায়, ২০ নভেম্বর সারা দেশে ৪৮ হাজার ৯৭৩ জন শিক্ষার্থী করোনার টিকা নিয়েছে। ওই দিন পর্যন্ত সারা দেশে মোট তিন লাখ ১৫ হাজার ৮৯২ জন শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। আর এ পর্যন্ত ১৮৫ জন শিক্ষার্থী টিকার দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়। এরপর গত ১ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীতে মাউশি জানিয়েছে, ঢাকায় টিকাদানের লক্ষ্যে মাউশির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে চার লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য সরকারের আইসিটি ও স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে, এসব শিক্ষার্থীর নিবন্ধন চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও মাদরাসা ও কারিগরি কলেজের শিক্ষার্থী মিলিয়ে ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো হতে পারে বলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।