নতুন শিক্ষাক্রম: বাংলা মাধ্যমকে উন্নত করার বদলে আরও দুর্বল করছি
ড. কামরুল হাসান মামুন: ‘তত্ত্বীয় ও মৌলিক বিজ্ঞানের মান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরে বিজ্ঞানশিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করা। অল্প বয়সেই বিজ্ঞানের বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাসম্ভব স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা দরকার। এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ভাষা হলো মাতৃভাষা। সবাইকে বিজ্ঞানী হতে হবে এমন কথা কেউ বলে না। কিন্তু ন্যূনতম বিজ্ঞান শিক্ষা সবার জন্য অপরিহার্য। যাদের বিজ্ঞানচর্চার প্রতি ঝোঁক ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর ওপর দক্ষতা আছে, তারা বিজ্ঞানী হবেন। কিন্তু মূলত প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাপক বিজ্ঞানশিক্ষার মাধ্যমেই বিজ্ঞান সচেতনতা গড়ে উঠবে এবং বিজ্ঞান সচেতন একটি জনগোষ্ঠী আমরা পাব। বিজ্ঞানচর্চায় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং রক্ত বার্ষিক পরিকল্পনা থাকাটাও অপরিহার্য।’-জামাল নজরুল ইসলাম।
খেয়াল করুন উনি বলছেন, উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরে বিজ্ঞানশিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করা এবং ছোট ক্লাস থেকেই বিজ্ঞানের বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাসম্ভব স্পষ্ট ধারণা তৈরি করার কথা। নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে আমরা কী করলাম? বিজ্ঞান শিক্ষাকে কমিয়ে প্রযুক্তি শিক্ষা আর কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিলাম। ঠিক আছে। সেটা করার জন্য শিক্ষার নানা শাখাপ্রশাখা আছে। যেমন কারিগরি ধারা। সেটাকে মজবুত করেন। দেশে শক্তিশালী স্কিলড কর্মী তৈরি করার জন্য কারিগরি ধারাকে শক্তিশালী করার বিকল্প নাই। কিন্তু শিক্ষা মূল ধারা যাকে সাধারণ শিক্ষা বলে সেটাকে কেন কারিগরি ধারায় নামিয়ে আনবেন? তাহলে জগদীশ চন্দ্র বসু, জামাল নজরুল ইসলামের মতো মানুষ তৈরি করব কীভাবে?
জামাল নজরুল ইসলাম বলেছেন, ছোট ক্লাস থেকেই বিজ্ঞান শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বিজ্ঞানশিক্ষা কেবল কিছু ইনফরমেশন বা তথ্যের মতো হলে চলবে না। বিজ্ঞান শিক্ষাকে আনন্দময় করে পড়ানো যেতে পারে। সঙ্গে এক্সট্রা কারিকুলার হিসেবে সিভিক সেন্স, নিয়মানুবর্তিতা, মানবিকতা, প্রাণ প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য ও ভালোবাসা শেখানো উচিত। কিন্তু কোনোভাবেই বিজ্ঞানের আগে প্রযুক্তি আসতে পারে না। অন্তত স্কুলে তো বিজ্ঞানের আগে প্রযুক্তি একেবারেই নয়। প্রযুক্তি আসবে কারিগরি ধারায়। অথচ যাদের এই দর্শনটাই পরিষ্কার না তারা এইবারের নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে বসে আছেন।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঠিক করতে হলে এখন থেকেই ধীরে ধীরে বাংলা মাধ্যমকে যদি উন্নত না করি মানুষ ইংরেজি মাধ্যমে ঝুঁকবেই। আর এদিকে আমরা বাংলা মাধ্যমকে উন্নত করার বদলে নতুন শিক্ষাক্রমের নামে আরও দুর্বল করছি, যার ফলে ইতোমধ্যেই শুনতে পাচ্ছি অনেকেই বাংলা মাধ্যম থেকে ইংরেজি মাধ্যমে চলে যাচ্ছে যা জাতির জন্য অশনি সংকেত। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা দ্বারা দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। বিদেশি ভাষায় পড়ে কেউ সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী আর বিজ্ঞান লেখক হতে পারবে না। মাতৃভাষায় শিক্ষার কথা সত্যেন বোস বলে গেছেন, জামাল নজরুল ইসলাম বলে গেছেন, আমাদের হারুন অর রশিদ স্যারও আমাদের সব সময় বলে গেছেন।
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/০২/২০২৪