নতুন পাঠ্যবই ছাপাতে পুলিশ পাহারায় ছাপাখানায় আসবে কাগজ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
হাতে সময় মাত্র ৩৬ দিন। এখনও প্রায় ১৫ কোটি বই ছাপানো বাকি। বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে শেষবেলায় তোড়জোড় করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। চুক্তি মেনে বই ছাপানোর কাজ শেষ করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন ছাপাখানার কর্মীরা।
তবে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে পেপারমিল থেকে কাগজ আনতে নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন ছাপাখানার মালিকদের অনেকে। কাগজবোঝাই গাড়িতে অবরোধকারীরা আগুন দিলে লোকসান গুনতে হবে তাদের। তারা এনসিটিবিকে এ সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নিয়েছে এনসিটিবিও। ছাপাখানায় কাগজ নিরাপদে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম। এখন স্ব স্ব এলাকার থানা পুলিশ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে পেপারমিল থেকে ছাপাখানায় কাগজ আনতে পারছেন না অনেকে। এটা নিয়েও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে আমরা চিঠি দিয়েছি। সেখান থেকে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন যারা পেপারমিল থেকে কাগজ কিনবেন, মিল থেকে প্রেস পর্যন্ত কাগজবোঝাই ট্রাক পৌঁছে দিতে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাস্তায় নিরাপত্তা দেবে পুলিশ।
তবে মুদ্রণশিল্প সমিতির নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, কাগজের সংকটও নেই। হরতাল-অবরোধে কাগজ আনা-নেওয়াতে সমস্যাও নেই। এনসিটিবি অনিয়ম করে ছোট ছোট প্রেসকে বেশি কাজ দিয়েছে। সক্ষমতা নেই এমন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় তারা এখন অজুহাত দেখাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুদ্রণশিল্প সমিতির সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘কাগজের সংকট কাদের? যাদের কাজ করার সক্ষমতা নেই, তাদের। এনসিটিবি নোয়াখালীর এক অগ্রণী প্রেসকে ৯৮ লটের মধ্যে ৯৪ লটের কাজ দিয়ে রেখেছে। ওদের কাজ করার কোনো তো অভিজ্ঞতায় নেই। ওরা এখন যথাসময়ে বই দিতে পারছে। এজন্য নানান অজুহাত দেখাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে কোন কাজটা বেধে আছে? বই ছাপার জন্য কাগজ আনবে, এটা তো জরুরি পণ্য। সেখানে আগুন দেবে কে? আমরাও তো কাগজ আনছি। এগুলো এনসিটিবি চেয়ারম্যানের মনগড়া কথা। তিনি নিজের ব্যর্থতা ও অনিয়ম ঢাকতে ছোটখাটো এবং কাজে অক্ষম প্রেসগুলোর মালিকদের কথাই সাংবাদিকদের জানাচ্ছেন। এটা উনাদের ব্যর্থতা।’
আর আর প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘কাগজ সংকট নয়, সংকটটা এনসিটিবির। তারা চালাকি বেশি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন। এখন শেষবেলায় লাফালাফি করছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে বই ছাপা কেউ শেষ করতে পারবে না। জানুয়ারির ১ তারিখে শতভাগ বই শিক্ষার্থীদের দেওয়া সম্ভব হবে না।’
কাগজ সংকটে পড়া নোয়াখালীর অগ্রণী প্রেসের স্বত্ত্বাধিকারী কাওছারুজ্জামান রুবেল বলেন, ‘আমাদের সংকট আছে কি, নেই; সেটা আমরা এনসিটিবিকে জানাবো। আপনাদের (গণমাধ্যম) জানাতে পারবো না। এনসিটিবি চিঠি দিয়ে মিডিয়ায় কোনো তথ্য দিতে নিষেধ করেছে।’
সংকট কাটিয়ে বই যথাসময়েই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো হবে বলে দাবি করেছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকের বেশিরভাগ বই আমরা উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। ষষ্ঠ ও সপ্তমের বই তো চলেই গেছে বেশিরভাগ। ষষ্ঠ ও সপ্তমের দুই বিষয়ের বই আটকে আছে। অষ্টম ও নবম নিয়ে সমস্যা।’
তিনি বলেন, ‘অর্থছাড় না হওয়ায় প্রেসগুলোকে বিল দিতে পারছি না। টাকা পেলে বিল দিতে পারলে সব সমস্যা কেটে যাবে। ওরা (প্রেস মালিক) যে কথাটা বলছে, তা হলো টাকা ও কাগজ পেলে তাদের জন্য বই ছাপিয়ে দেওয়া কোনো সমস্যাই না। তাছাড়া অর্থছাড়ের পর যদি সময় হাতে কম থাকে, তাহলে ফাঁকা প্রেসগুলোতে কাজ ভাগাভাগি করে দেওয়া হবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই বই ছাপিয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে।’ সুত্র জাগো নিউজ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৫/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়