নতুন দিনের সূচনা
নিউজ ডেস্ক।।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন গতকাল বুধবার ছিল বেশ আলো ঝলমলে, আক্ষরিক অর্থেই। প্রায় তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম প্রেসিডেন্টের শপথের দিনটি ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন জো বাইডেন। শপথের পর অভিষেক ভাষণে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস ও আশার দিন শুরু হলো।
জরুরি অবস্থা এবং নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল তিনি দেশটির সংসদ ভবন ক্যাপিটল হিলে শপথ নেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জন রবার্ট তাকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন। এর পরপরই বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ভবন হোয়াইট হাউসে পৌঁছান তিনি। তবে হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হতে বাইডেনকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ।
পাঁচ দশক ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত হলেও তাকে কঠোর সংগ্রামের পর দেশটির সর্বোচ্চ আসনে বসতে হয়েছে। এ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রিচার্ড নিক্সন থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত আটজন প্রেসিডেন্টকে দেখেছেন তিনি। বারাক ওবামার দুই মেয়াদে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন ৭৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।
ক্যাপিটল ভবনের ওয়েস্ট ফ্রন্টে আয়োজন করা হয় শপথ অনুষ্ঠানের। নিজের পরিবারের ১২৭ বছরের পুরোনো বাইবেলের একটি কপি হাতে শপথবাক্য পাঠ করেন বাইডেন। শপথ নেওয়ার পরপরই ক্যাপিটল হিলে অভিষেক ভাষণ দেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, 'এই দিনটি গণতন্ত্রের। এই দিনটি আমেরিকার। এই দিনটি ইতিহাস ও আশার দিন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমেরিকাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে, তার দেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আজকে আমরা গণতন্ত্রের বিজয় উদযাপন করছি। বাইডেন বলেন, 'আমরা শিখেছি যে গণতন্ত্র অত্যন্ত মূল্যবান।' এখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বাইডেনকে এবার কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। তিনি এমন সময় দায়িত্ব নিলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র করোনা মহামারিতে লণ্ডভণ্ড, অর্থনীতি পর্যুদস্ত। তিনি এমন দেশটির হাল ধরছেন, যেটি এখন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোণঠাসা।
এদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন কমলা হ্যারিস। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। তার আগে আরও ৪৮ জন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাদের সবাই পুরুষ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি হয়তো প্রথম নারী, তবে আমি শেষ নারী নই।
শপথ অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন ও জর্জ ডব্লিউ বুশ। ছিলেন মিশেল ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন। ক্যাপিটল হিলের সামনের এই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় ছিল ২৫ হাজার সেনা।
মিনেসোটা সিনেটর অ্যামি ক্লোবাকার অভিষেক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন। বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সংগীত তারকা লেডি গাগা। এ সময় উপস্থিত সবাই বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে একাত্ম হন। হ্যারিসের শপথের পর সংগীত পরিবেশন করেন জেনিফার লোপেজ।
বাইডেনের শপথের পর বক্তব্য দেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। তিনি সেটাই করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ১৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বিদায়ী প্রেসিডেন্ট নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন।
তবে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্প বাইডেনকে লেখা একটি চিঠি রেখে গেছেন। বিদায়ী ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও তার উত্তরসূরি জিল বাইডেনের জন্য একটি চিঠি রেখে গেছেন।
বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়ে তার বন্ধু ওবামা টুইটে লিখেছেন, 'সময় এখন আপনার।' এবার ন্যাশনাল মলে শপথ দেখার জন্য আগের মতো লাখ লাখ সমর্থক হাজির ছিলেন না। তার পরিবর্তে সেখানে রাখা ছিল দুই লাখ পতাকা।
বাইডেনের শপথে সামান্যসংখ্যক অতিথি ছিলেন। সিনেট মেজরিটি নেতা মিচ ম্যাককনেলও উপস্থিত ছিলেন শপথে। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথের আগে রিপাবলিকান দলের ১৭ সদস্য এক চিঠিতে বলেছেন, তারা বাইডেনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে ওয়াশিংটন ডিসির একটি গির্জায় অনুষ্ঠিত প্রার্থনা সভায় সস্ত্রীক যোগ দেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা সিনেটর মিচ ম্যাককনেল এবং প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাইডেন দ্বিতীয় রোমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট। তার আগে ছিলেন ডেমোক্র্যাট জন এফ কেনেডি। ১৯৬৩ সালে আততায়ীদের গুলিতে কেনেডি নিহত হওয়ার পর এই গির্জাতেই তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বুধবার উৎসব করছেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনেক সমর্থক শহরটিকে এড়িয়ে চলছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা যে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে সমাবেশ বাতিল করেছে পাবলিক অ্যাডভোকেট নামের একটি গ্রুপ। ট্রাম্পপন্থি অন্যান্য গ্রুপের নেতারা বলছেন যে তারাও শহরে যাচ্ছেন না। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমস।