দ্রুত পড়ালেখার পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন
করোনা মহামারিতে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণার পর সঙ্গত কারণেই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় চলছে পাঠদানের প্রস্তুতি। তবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই পাঠদানের জন্য প্রস্তুত নয়। যুগান্তরের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের অন্তত ১৩ জেলায় বন্যা দেখা দেওয়ায় সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বন্যায় সেখানকার শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি অবস্থায় তো রয়েছেই; উপরন্তু ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কমপক্ষে অর্ধশত বিদ্যালয়। এর বাইরে ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্য এসব এলাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদান চালুর চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন। তবে বন্যাকবলিত ও ভাঙনের শিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ঘনীভূত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
এর আগে আমরা দেখেছি, করোনায় বন্ধ থাকাকালীন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন-কোথাও ভবনের ভেতরেই চলছে পশুপালন। আবার কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসায়িক পণ্যের গুদামঘর। অনেক জায়গায় বখাটেদের নিয়মিত আড্ডার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে, এমনকি বারান্দায় করা হচ্ছে সবজির চাষ। এ অবস্থায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে বন্যা দেখা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে জরুরি বিকল্প কী হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যার সঙ্গে বছর দেড়েক আগে যোগ হয়েছে করোনার ভয়াবহতা। এর ওপর আবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে বন্যার তাণ্ডব। অতীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন-ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন জেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে দেখা গেছে। সেসময় সেখানকার নদ-নদীগুলোয় জোয়ার এলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠত। এছাড়া কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়ায় দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে হয়েছে এবং এর ফলে সেখানকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।
চলমান পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা যেমন সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন, তেমনি শিক্ষার্থীরাও পড়েছে মহাবিপদে। করোনার কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর যখন তারা তাদের প্রিয় বিদ্যালয়ে পা রাখার জন্য উন্মুখ হয়ে প্রহর গুনছে, তখন অবহেলাজনিত কারণের পাশাপাশি হঠাৎ আবির্ভূত বন্যায় সৃষ্ট অবকাঠামোগত দুর্দশা ও নানা অব্যবস্থা বিরাজ করছে সেখানে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক পাঠগ্রহণে মনোনিবেশ করা যে কঠিন হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সংস্কার ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে সেখানে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।