দ্বন্দ্বে কমিটিহীন শিক্ষক সমিতি
কুমিল্লাঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাত মাস ধরে নেই শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করলেও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ ভেস্তে যায় সেই উদ্যোগ। এরপর আর নির্বাচনের মুখ দেখেনি শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বকারী এ সংগঠন। কবে নাগাদ নতুন কমিটি গঠন হবে, সে-সম্পর্কেও জানে না কেউ। ফলে শিক্ষকদের ওপর বিভিন্ন আদেশ চাপিয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রতি বছরের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব না হলে ১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ সভা আহ্বান করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই অনুযায়ী ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন আয়োজন করে তৎকালীন পরিষদ। তবে নির্বাচনের দিন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা ভোটকেন্দ্র দখল করে নির্বাচন হতে দেননি। পরে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের দুটি পক্ষ রয়েছে। উভয়ে নিজেদের বঙ্গবন্ধু পরিষদ বলে দাবি করে। একটি অংশের বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আমান মাহবুব। সর্বশেষ শিক্ষক সমিতির ১৫টি পদেই নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের পক্ষ। আরেকটি অংশের দায়িত্বে রয়েছেন সভাপতি কাজী ওমর সিদ্দিকী ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান। দ্বিতীয় অংশের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে উপাচার্যপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর অনাস্থা প্রকাশ করে ২৪ নভেম্বর চিঠিও দিয়েছিল তারা। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য সাধারণ সভা আহ্বান করা হলেও তাতে যোগ দেননি তারা।
কমিটি না থাকায় শিক্ষকরাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে দাবি করছেন উভয় পক্ষের নেতারা। কামাল-আমান সমর্থিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি মোহাম্মদ মাকসুদুল করিম বলেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের দিন শিক্ষকদের একটি পক্ষ বিভিন্ন ইস্যু তুলে নির্বাচন হতে দেয়নি। একটা বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি না থাকলে শিক্ষকরা তাদের দাবিগুলো উত্থাপন করতে পারেন না। শিক্ষকদের স্বার্থেই কমিটি গঠন প্রয়োজন।
ওমর-জাহিদ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু পরিষদ সমর্থিত নেতা এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কমিটির দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা দুরভিসন্ধিমূলকভাবে তফসিল ঘোষণা করায় আমরা নির্বাচনে যাইনি। তবে শিক্ষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার জন্যই সমিতি থাকা জরুরি।
কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, এর জন্য আমরা উভয় পক্ষই দায়ী। সর্বশেষ যারা সমিতির দায়িত্বে ছিল, তারা এবারও চতুরতার সঙ্গে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। সে জন্য আমরা নির্বাচনে বাধা দিয়েছি। কিন্তু এখন আমরা চাই নির্বাচন হোক।’
কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২২-এর সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই নির্বাচন আয়োজন করেছিলাম। সাধারণ সভাও ডেকেছি। তারা নির্বাচন হতে দেয়নি, আবার সাধারণ সভায়ও আসেনি। শিক্ষক সমিতি না থাকার পুরো দায় তাদের।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৭/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়