দেশে ওমিক্রনের নতুন উপ-ধরন শনাক্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দেশে করোনা ভাইরাস বিশেষ ধরন ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট বা উপ-ধরন বিএ.৪/৫ (ইঅ.৪/৫) শনাক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে দুজনের শরীরে এটি শনাক্ত হয়। যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে সংগৃহীত ভাইরাসের নমুনা (স্পাইক প্রোটিন) সংগ্রহণ করে জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে ওমিক্রনের নতুন এ উপ-ধরনটি শনাক্ত করেন।
গবেষক দল জানান, ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত দুজন ব্যক্তিই পুরুষ। যাদের একজনের বয়স ৪৪ ও আরেকজনের বয়স ৭৯ বছর। তাদের মধ্যে একজন করোনার টিকার বুস্টার ডোজ এবং অপরজন দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং আরেকজন বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের শরীরে জ্বর, গলাব্যথা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তারা উভয়েই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন।
গবেষক দল আরও জানান, বিএ.৪/৫(ইঅ.৪/৫) সাব-ভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনে ওমিক্রনের মতোই মিউটেশন দেখা যায়। তবে তার সঙ্গে এ সাব-ভ্যারিয়েন্টে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো স্পাইক প্রোটিনের ৪৫২ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডে মিউটেশন থাকে। এ ছাড়া এ সাব-ভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ৪৮৬ নম্ব^র অ্যামাইনো অ্যাসিডেও মিউটেশন দেখা যায়। ওমিক্রনের এ দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট গত জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। গত মে মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ ভারতে এ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এ উপ-ধরণটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সাম্প্রতিককালে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
যবিপ্রবির উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ সাব-ভ্যারিয়েন্টটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এ জন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। অচিরেই পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা সম্ভব হবে। এ সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণের কাজ জিনোম সেন্টারে অব্যাহত থাকবে।
করোনায় আরও শনাক্ত ৮৭৪ একজনের মৃত্যু দেশে আগের দিন সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮৭৪ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ৮৭৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.০৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪ জন। তাদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২৯ হাজার ১৩৩ জন। গতকাল মারা যাওয়া ব্যক্তি পুরুষ এবং তার বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদিন সুস্থ হয়েছেন ৮৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৯৮৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭ হাজার ৮৯৩টি, অ্যান্টিজেন পরীক্ষাসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭ হাজার ৯২৭টি। এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ৪২ লাখ ৪১ হাজার ২৫৬টি। এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩.৭৫ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭.৩৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১.৪৯ শতাংশ।