দেশসেরা উদ্ভাবক হাকিমপুরের শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান
আফতাবুজ্জামান তাজ, হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি।।
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান দেশসেরা উদ্ভাবক ২০২১ নির্বাচিত হয়েছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ইনোভেশন শোকেসিং-এ সারা দেশ থেকে তিনজন শিক্ষা অফিসার এবং দুইজন সহকারী শিক্ষককে বিভিন্ন উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ দেশসেরা উদ্ভাবক ২০২১ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এর মধ্যে হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান দেশসেরা উদ্ভাবক ২০২১ নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অনলাইনে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের এই ইনোভেশন শোকেসিং প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন, বিশেষ অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মোঃ হাসিবুল আলম এবং সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম। প্রাথমিক শিক্ষায় ‘করোনাকালীন শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতিপূরণ’ শীর্ষক উদ্ভাবনী কার্যক্রমের জন্য শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান দেশসেরা উদ্ভাবক নির্বাচিত হন ।
হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান জানান, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণে গোটা বিশ্ব যখন স্থবির তখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ইনোভেশন আইডিয়ার আহŸান করে। তখন থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য করোনাকালীন বিকল্প শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে ভাবতে থাকি। সেই ভাবনা থেকেই প্রাথমিকের পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষ শিক্ষকবৃন্দের পাঠদানের অডিও-ভিডিও রেকর্ড করে তা প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের প্রদান (মেমোরি কার্ডে) করার মাধ্যমে ‘করোনাকালীন পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা’ শীর্ষক ইনোভেশন আইডিয়া নিয়ে কাজ করেছি। পরবর্তীতে তা পাইলটিং-এর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হক টুকু, বাংলাহিলি (১) মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমানসহ বিভিন্ন প্রাথমিকের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ জানান, ২০১৮ সালের জুন মাসে মাসুদুল হাসান স্যার হাকিমপুর উপজেলায় যোগদান করেন। তারপর থেকেই উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারের শিক্ষা ভিত্তিক প্রতিটি এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। বিদ্যালয় সজ্জিতকরণ (১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলার ইতিহাস সংবলিত ছবি দ্বারা শ্রেণি কক্ষ সজ্জিত), ডিজিটাল মনিটরের মাধ্যমে শিশু শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম, মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৭ মার্চের ভাষণের চিত্র, সততা স্টোর, নৈতিকতার গ্যালারী, শিশু শ্রেণিসহ অন্যান্য শ্রেণিকক্ষ ও পতাকা বেদিতে টাইলস, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার ও শিশু পার্ক নির্মাণ, বিভিন্ন উপকরণসহ করোনাকালীন শিশুদের ক্লাস পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা, বিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, করোনাকালীন শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি কেটে উঠার কৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। তারা আরো জানান, তিনি ২০২০ সালে ‘কন্যা শিশু সুরক্ষা সেল’ শীর্ষক ইনোভেশন আইডিয়া নিয়ে কাজ করে দেশসেরা হয়েছিলেন।
দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান দিনাজপুর জেলাসহ রংপুর বিভাগের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তিনি আগের স্টেশনগুলোতেও অনেক ভালো কাজের দৃষ্টান্ত রেখেছেন এবং অনেক ইনোভেটিভ কাজ করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষার রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মাসুদুল হাসান আমাদের একজন ভালো কর্মকর্তা। নতুন নতুন উদ্ভাবনী কাজ দিয়ে তিনি শিক্ষা বিস্তারে ও শিক্ষার মানোন্ননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি একজন সৃজনশীল কর্মকর্তা। এর আগেও সৃজনশীল কাজের জন্য তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন।