দাবি আদায়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি
নিউজ ডেস্ক।।
আইন ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে দায়িত্ব পাওয়া বিভাগীয় প্রধানের নিয়োগ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিভাগের একাংশ শিক্ষক সকল ধরণের ক্লাস-পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের রসায়ন গ্যালারিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের একাংশ শিক্ষক 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৯' অনুযায়ী রসায়ন বিভাগের প্রধান নিয়োগের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের সদ্য সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক এইচ. এম. তরিকুল ইসলাম বলেন, বিভাগে বর্তমানে মোট এগারো শিক্ষকের মধ্যে দুইজন সহযোগী, ছয়জন সহকারি অধ্যাপক ও তিনজন প্রভাষক রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইন মোতাবেক কোনো বিভাগে অধ্যাপক কর্মরত না থাকলে সহযোগী অধ্যাপকগণের মধ্যে থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। বিভাগে যোগ্য সহযোগী অধ্যাপক কর্মরত থাকলে সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার নিচে কারো বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এই বিভাগের জ্যেষ্ঠতম সহযোগী অধ্যাপক গত ১৩ জুন দায়িত্ব শেষ করেন।
আইন মোতাবেক দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ড. বিজয় মোহন চাকী পরবর্তী বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। কিন্তু গত ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন লঙ্ঘন করে সহযোগী অধ্যাপককে নিয়োগ না দিয়ে ঘৃণ্য উপায়ে রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্ধ অনুগত জুনিয়র শিক্ষক তানিয়া তোফাজকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রদান করায় শিক্ষকদের মধ্যে একাডেমিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে।
তিনি বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানে উচ্চ আদালতে বিভাগীয় প্রধান পদে অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট করা হলে আদালত রিটকারী বঞ্চিত শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় আইন মোতাবেক বিভাগীয় প্রধানের পদে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাষ্ট্রের আইন অবজ্ঞা করে স্বেচ্ছাচারভাবে দুর্নীতি করেই চলেছেন।
বিভাগের জ্যেষ্ঠ এই শিক্ষক বলেন, সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করে আদালতে রিটকারী বঞ্চিত শিক্ষকের সভাপতিত্বে চলমান পরীক্ষা কমিটিকে বাতিল করে বিভাগের ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিক্রমা রুদ্ধ করে দিয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুর্নীতি চালাতে থাকলে রসায়ন বিভাগের প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একের পর এক একাডেমিক জটিলতায় পতিত হবে। এর সাথে এ বিভাগে পড়ুয়া প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থী প্রশাসনের প্রতারণার ফলে নতুনভাবে একাডেমিক দুর্নীতির জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে।
বিভাগের রিট কারী শিক্ষক ড. বিজন মোহন চাকী বলেন, অনিয়মতান্ত্রিক পরিবেশে শিক্ষক হিসেবে আমাদের পক্ষে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এরূপ অনিয়ম-অবিচার নৈতিকভাবে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। কাজেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের এরূপ অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে বিভাগকে সচল রাখার প্রথম ধাপ হিসেবে রসায়ন বিভাগে আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির ও স্বেচ্ছাচারীতার মাধ্যমে বিভাগকে কার্যত অচল করে দিচ্ছে। তাই আমরা রসায়ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হচ্ছি। এর প্রথম কর্মসূচি হিসেবে আমরা রসায়ন বিভাগ আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী, সহকারি অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ, নুরুজ্জামান খান, প্রভাষক ড. জাকির হোসেন, সাদ্দাম হোসেন, সালমা বেগম।
উল্লেখ্য, রসায়ন বিভাগের মত এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পদে আইন অমান্য এবং জৈষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ এবং গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে আইন অমান্য করে তিন বছরের জায়গায় দুই বছরের জন্য নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে।