দক্ষিণাঞ্চলে করোনা পরিস্থিতিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি
আপডেট :
এপ্রিল ১৯, ২০২১
।। বিন-ই-আমিন ।।
দক্ষিণাঞ্চলের ডায়রিয়া পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দিন দিন। করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে লকডাউন অবস্থায় স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির,সেখানে ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব যেনো মরার উপর খাঁড়ার গা হয়ে দেখা দিয়েছে পুরো বিভাগে। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার ডায়রিয়া ও করোনা পরিস্থিতিঃ
পটুয়াখালী ।।
করোনা পরিস্থিতিতে জেলার লকডাউন ও করোনা রোগীর বিষয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান,করোনার কারনে সারা দেশে লকডাউন চলছে। পটুয়াখালীতেও আমরা সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোরভাবে লকডাউনের আওতায় আছি। সবসময় আমার অফিসার বৃন্দ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিছু কিছু জায়গায় যারা লকডাউন উপেক্ষা করে বাহিরে নামছে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে করোনার চেয়ে জেলার ডায়রিয়া পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ। বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রচুর ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আমাদের মজুত স্যালাইনও শেষের পথে। আমরা স্যালাইনের চাহিদা দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় লোক পাঠিয়েছি। উপজেলা সদরের কোনো হাসপাতালেই জায়গা খালি নেই। অনেকে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৩২৮ জন ডায়রিয়া রোগী নতুন ভর্তি হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৯৯৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ৪৯ জন।
পিরোজপুর।।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান,আমাদের এখানে ডায়রিয়া রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে। কাউখালিতে আক্রান্তের পরিমান তুলনামূলক বেশি। অন্য বছরের চেয়ে আক্রান্তের পরিমান বেশি হলেও ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। করোনা পরিস্থিতিও মোটামুটি ভালো। লকডাউনে আমার বিভিন্ন অফিসার টিম করে কাজ করছে। যারা আইন অমান্য করছেন তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।
ঝালকাঠি ঃ
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান,এখন পর্যন্ত জেলায় একহাজার ১১৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ২৫ জন। চলমান লকডাউনে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হচ্ছে। এরমধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১২০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে জায়গা না থাকায় অনেককে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাদের অবস্থা একটু খারাপ তারাই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অভ্যন্তরিন ঔষধ ও স্যালাইনের পর্যাপ্ত চাহিদা নেই। নলছিটিতে ডায়রিয়া রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরিন স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালের আরএমও ডায়রিয়া পরিস্থিতি উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষকে জানালে পৌরসভার মেয়র আঃ ওয়াহেদ খান জরুরিভিত্তিতে ৭২৮ ব্যাগ আইভি স্যালাইনের ব্যবস্থা করেন। পরে স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিরাও এগিয়ে আসেন।
বরগুনা :
করোনায় ডায়রিয়ার প্রাদূর্ভাব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারন ব্যাখ্যা করলেন বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আশ্রাফুল ইসলাম জুপিটার। তিনি "শিক্ষাবার্তা ডটকমের" সাথে আলাপ কালে জানান,দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ এই সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। সাধারণত নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকজন এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। করোনায় যেমন উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকজন বেশি আক্রান্ত হয়। ডায়রিয়ায় হয় বিপরীত। কারন উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজন শারীরিক পরিশ্রম করে কম। তাছাড়া তারা রোদেও কম যায়। ভিটামিন ডি তাদের শরীরে কম থাকে। পক্ষান্তরে নিম্ন আয়র লোকজন পরিস্কার পানির সুবিধা সব সময় পায়না। তাছাড়া অনেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও পায়খানা ব্যবহার করছে। পুকুরে গোসল করে আবার থালাবাসন ধূইছে। রান্না ও ধোয়ামোছার কাজে পুকুর ও নদীর পানি ব্যবহার করছে। ফলে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আরেকটি কারন হলো এই সময় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলের পানি ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পানি সবাই ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন না। বরগুনা জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তের পরিমাণ অনেক। স্যালাইন ও অভ্যন্তিরন ঔষধ সংকট আছে। আমরা একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়েছি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও সিএমএসডি'র সরঞ্জামের জন্য।
ভোলাঃ
জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মো. রেজাউল ইসলাম জানান,ভোলা জেলার ডায়রিয়া পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। আমাদের হাসপাতালে রোগীদের আবাসন ব্যবস্থার সমস্যা হচ্ছে। ডায়রিয়া ঔষধ ও স্যালাইন সমস্যাও প্রকট। হঠাৎ ডায়রিয়া পরিস্থিতি খারাপ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, সাধারণত এপ্রিলে ডায়রিয়া দেখা দেয়। প্রচন্ড গরম,গরমে বেশি করে খোলা জায়গায় লেবুর শরবত খাওয়া, ফল ও শাক সবজি ঠিকমতো না ধোয়া,ময়লা পানি দ্বারা খাবার সরঞ্জাম ধৌতকরা,পরিস্কার পানি কম খাওয়া,অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা সহ বিভিন্ন কারনে ডায়রিয়া পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
জেলার করোনা পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি জানান, এ পর্যন্ত একহাজার ৫২০ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১৮ জন।
জেলার করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে সর্বশেষ তথ্য জানান জেলার নেজারত কালেক্টরেট। তিনি জানান লকডাউনের ৫ম দিনেও আমরা ৩৯ মামলা ও ২২ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেছি। লকডাউনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারনে ভোলায় ৯ জন,দৌলতখানে ৫ জন,বোরহানউদ্দিনে ৯ জন,তজুমদ্দিনে ৮ জন ও চরফ্যাশন উপজেলায় ১৫ জনকে মোট ২২ হাজার ৯ শত টাকা জরিমানা করা হয়।
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে পেজে লাইক দিয়ে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।