তিন বোনের নিখোঁজ রহস্য
নিউজ ডেস্ক।।
খালার অবহেলা এবং বঞ্চনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঘর ছাড়ে রাজধানীর আদাবর থেকে নিখোঁজ হওয়া তিন বোন। বর্তমানে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের জিম্মায় রয়েছে তারা। সম্প্রতি তিন বোনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে তেজগাঁও উপ-কমিশনার (ডিসি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগরের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, তাদেরকে আদালতে তোলা হবে। সেখানে তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে। তারা বাবা-দাদি নাকি খালাদের কাছে থাকবেন এটা তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। তাদের মধ্যে আজ (রোববার) দু’বোনের এসএসসি পরীক্ষা।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তাদের নামে কোনো টিকটক অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়নি। একটি পুরোনো ইনস্ট্রাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেলেও সেখানে তারা অ্যাক্টিভ নয়। প্রাথমিকভাবে তারা জানিয়েছে, বিভিন্ন কারণে খালার আচরণে বিরক্ত হয়ে মানসিকভাবে বিষণ্ন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তারা যশোরে থাকা দাদির সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিকাশের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা পাঠায়। এরপর তারা সেই টাকা দিয়ে গাবতলী থেকে অসুস্থ বাবার কাছে চলে যায়। যদিও তারা ইতিমধ্যে জানিয়েছে, খালা নয় বাবার কাছেই থাকতে চায়। তিনি বলেন, ২০১২ সালে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর তারা মায়ের সঙ্গে থাকতো।
কয়েক বছর আগে তাদের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে তারা মোহাম্মদপুর এবং খিলগাঁওয়ে থাকা দুই খালার বাসায় থাকতো। পরবর্তীতে বাবা চাকরি শেষে অসুস্থ হয়ে পড়লে যশোরে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত বাবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ছিল না তাদের। এদিকে, তাদের মা মারা যাওয়ার পর দুই খালার কাছে যে ব্যবহার আশা করেছিল সেটি তারা পায়নি। এমনকি তাদের নিজস্ব কোনো মুঠোফোন পর্যন্ত ছিল না।
দুই খালার কাছে তিন বোন থাকলেও বিভিন্ন সময়ে খালাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। সেই ক্ষোভের কারণে গত ১৮ই নভেম্বর আদাবরের শেখেরটেকে খালার বাসা থেকে কাউকে না বলে তারা যশোরে অসুস্থ বাবার কাছে চলে যায়। তাদের মধ্যে এক বোন আদাবরে খালা সাজিদা নওরীনের বাসায় থাকতো। আর অন্য দুই বোন থাকতো খিলগাঁওয়ে অন্য এক খালার বাসায়। তাদের মধ্যে বড় বোন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকেয়া (১৮), মেজো বোন জয়নব আরা (১৭) ও ছোট বোন খাদিজা আরা (১৬)। এর মধ্যে জয়নব ও খাদিজা এবার একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তাদের বাবা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। তবে মাঝে মধ্যে দাদির মোবাইলে বাবার সঙ্গে তিন বোনের কথা হতো। দাদির পাঠানো টাকা দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে তারা গাবতলীতে জননী পরিবহনের একটি বাসে করে যশোর চলে যায়। সেখান থেকে হামিদপুরে বাবার কাছে যায় তারা। এদিকে, ওই তিন বোন নিখোঁজ হওয়ার পর আদাবর থানায় তাদের খালা সানজিদা নওরীন একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
তখন তাদের খালা অভিযোগ করেছিলেন তিন বোন টিকটকে আসক্ত। কিন্তু পুলিশ সেই অভিযোগের সত্যতা পায়নি। উপ-কমিশনার আরও বলেন, আমরা তাদের কাছে কোনো মোবাইল ফোন পাইনি। খালার গণমাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাদের তিন বোনকে প্রথমে র্যাবের সহায়তায় শনাক্ত করে যশোর থেকে পরবর্তীতে পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এর আগে খালার বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওই তিন বোন এসএসসি পরীক্ষার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, সার্টিফিকেট এবং দুটি ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে যায়।